নাজিয়া হক অনি: গাড়ির জানালা থেকে বাইরে চোখ পড়লো। এক সুললিত সুন্দরী মেয়ে বোরকা ও হিজাব করা, বয়স বাইশ-তেইশ এর বেশি না, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত রিকশা বা সিএনজিচালিত অটো অথবা বাসের অপেক্ষায়।
মেয়েটা দেখতে খুব সাদামাটা, মুখে প্রসাধন নেই, কিন্তু চোখ-নাক-মুখ খুবই স্পষ্ট, কিছু মেয়ে থাকে না যাদের কিছু মাখতে হয় না মুখে, কিন্তু তারপরেও রূপবতী মনে হয়, ঠিক তেমন। ফর্সা, মায়াবতী, খুবই স্নিগ্ধ একটি চেহারা, যা মহাখালির কাঁচা বাজারের ঐ রাস্তার চারপাশের সাথে মেলানো যাচ্ছিল না।
গাড়ি অল্প অল্প করে এগুচ্ছে, জ্যাম অনেক। চোখ পড়লো বোরকা পরা মেয়েটি থেকে পাঁচ ছয় ফিট দূরত্বে দুটি ছেলের দিকে। একজন ছেলে তার দুই পায়ের মাঝের অংশে এমনভাবে চুলকাচ্ছিল, যে মনে হল তার প্যান্টের ভিতর কেউ বিছুটি পাতা ছেড়ে দিয়েছে। চুলকানি চুলকানি! রগড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। ছেলেটার চেহারার দিকে তাকালাম, এর বয়স সম্ভবত পঁচিশের কাছাকাছি হবে, মুখটা এমন করে রেখেছিল দেখে মনে হলো বাংলা সিনেমায় নায়িকাকে রেপ করার আগে ভিলেনরা যেভাবে জিভ চেটে-পুটে রস ফেলে ঠিক তেমন। আরও ভাল করে বললে তামিল সিনেমার নায়কগুলোর মত উদ্ভট যৌনাকাঙ্ক্ষায় কাতর করে রাখা চেহারা, দেখে আমি হাসবো, না বিরক্ত হবো, বুঝতে পারলাম না।
চুলকাচ্ছে চুলকাচ্ছে। চুলকাতে চুলকাতে পাশের জনকে কি জানি বললো, আবার তাকিয়ে রইল মেয়েটার দিকে। এবার চুলকানি থামিয়ে ঐখানেই হাত দিয়ে রাখলো, প্যান্ট ঠিক করল একটু। আবার চুলকালো। সত্যি বলতে কি তার চেহারা আর তার চোখ থেকে যেই ভাষা বের হচ্ছিল তা থেকে তার দুপায়ের মধ্যের অঙ্গটিকে চুলকানোর দৃশ্যই আমার কাছে বেশি অশ্লীল বলে মনে হচ্ছিল, তাই তার চেহারার দিকে না তাকিয়ে আমি তার চুলকানির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।
সে দেখছিল কালো বোরখায় আপাদমস্তক মোড়ানো একটি মাংসপিণ্ডকে। আমি দেখছিলাম তার মাংসপিণ্ডের চুলকানিকে।
মাংসপিণ্ডই তো! নারীরা আবার মানুষ নাকি! নারী হলো সামনে ও পিছনে তাল তাল মাংসপিণ্ড ও কিছু ছিদ্রের সমষ্টি একটি যৌন খেলনা, যা দেখলেই শিশুদের মত এই দুপেয়ে পুরুষ নামক অমানুষ প্রাণীগুলো খেলতে চায়, উৎফুল্ল হয়ে ওঠে তাদের দুপায়ের মধ্যকার অঙ্গ। সেই খেলার উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে তাদের অঙ্গে চুলকানি শুরু হয়ে যায়, শুরু হয় রগড়া-রগড়ি, দলাই মলাই, প্যান্ট ঠিক করা, একবার-দুইবার, বার বার।
বোরকার কাপড় এক পরত না হয়ে যদি লেপ তোষকের মতো মোটাও হয় তাও এদের এই চুলকানি বন্ধ হবে না। কারণ তারা যখন কোন মেয়েকে দেখে, ঐ চোখে তারা কোন নারী দেখে না, কোন মানুষ দেখে না, দেখে কেবল তাল তাল মাংসপিণ্ড। যার সৌন্দর্য বোরকার পরত ভেদ করেও যাদের কল্পনা থেকে বাস্তবে চুলকানি এনে দেয়। বোরকা পরেও যাদের সামনে নারীরা নগ্ন।
আর আমি যখন এদের দেখি, আমি দেখি একটি অঙ্গ, আপাদমস্তক কুৎসিত, কুঁচকানো, দুর্গন্ধযুক্ত একটা অঙ্গ মাত্র, দুই পায়ের মাঝখানে, উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে যেখানে চুলকানি উঠে, যেটাকে তারা রগড়াতে থাকে, কিন্তু কার্যত যার কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই, আর করতে পারলেও যার স্থায়িত্ব অতি ক্ষুদ্র।
আমি সেই অঙ্গে তাদের আপাদ মস্তক দেখি, প্যান্ট-শার্ট পরা একটি কুৎসিত অঙ্গ, যা আরেকটি অঙ্গকে মৈথুন করে চলে, জনসম্মুখে।
ওয়াক থু!!!
ডা. নাজিয়া হক অনি: চিকিৎসক ও লেখক
শিরোনামে বোরকা কে তূচ্ছ করা হয়েছে “হায় বোরকা” এভাবে না লিখলেও পারতেন