
হাসিনা আকতার নিগার: বুকের ভেতর এক তীব্র দহন। আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বার বার কলুষিত করার এই প্রক্রিয়া কি আর থামবে না। অথচ এইখানে নারী পুরুষ সমিম্মিলিতভাবে আন্দোলন করেছে সেই ১৯৫২ থেকে ৯০ এর স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। টিএসসি হলো বাঙালীর সংস্কৃতি বোধের মিলন মেলা। কিন্তু আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের অপমান করে সামজিক অবক্ষয় ঘটিয়ে কুলষিত করছে বাঙালীর সার্বজনীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে।
১লা বৈশাখের ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে যদি সামগ্রকিভাবে বিবেচনা করা হয় তবে দেখা যায়, নারীদের উপর হামলা ঘটিয়েছে দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সবগুলো ঘটনাকে এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবার অবকাশ খুবই কম। তার কারণ হলো রাজনৈতিকভাবে এই ঘটনার যে কূটচাল চালা হচ্ছে তাতে অপরাধী পার পেয়ে যাবার রাস্তা পাবে সহজে, সেইসাথে সৃষ্টি হবে আরও নীতিহীনতা বোধের।
নারীদের বিবস্ত্র করে আজ কেবল নারীর আত্মসম্মান বোধে আঘাত করেনি, তার চেয়ে বেশী আঘাত করেছে বাঙালী চেতনাবোধের হাজার বছরের লালিত উৎসব বর্ষবরণকে। ১৪২২ সালের এই ঘটনার পর কোন পরিবার কি চাইবে আগামীতে এমন অনুষ্ঠানে সামিল হতে। কি করে নিরাপদ মনে করবে আগামী বছরের অনুষ্ঠানে তার মেয়েটি এমন ঘটনার শিকার হবে না। প্রকৃতপক্ষে রমনার বটমূলে বোমা দিয়ে মানুষ মেরে বর্ষবরণের এমন উৎসবকে বন্ধ করে দেবার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা সফল হতে পারেনি বলে আজ তার এমন একটি পথ বেছে নিলো যা দিয়ে পরিবার থেকে বন্ধ হবে বর্ষ বরণে নারীদের সামিল হবার আয়োজন।
অমানুষ রুচিহীন মানুষদের বিবেক বর্জিত আচরণ নারীদের দমিয়ে রাখার পথ এখন রুদ্ধ। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যুগে যুগে নারী তার আপন শক্তিতে সংসার সমাজে অসুরকে বধ করে আসছে। বিশ্ব সংসারে নারীকে অবলা বলে বার বার উপেক্ষিত করা হলেও এটা অনস্বীকার্য যে নারী থাকে সকল রূপে। তাই নারী হিসাবে নারীর অপমানে নীরবে সইব এটা হয় না কোনদিন।
তবে যে শংকাটা আজ আমাদের সামনে অনেক বেশী তা হলো প্রতিবাদী কন্ঠগুলোকে দমিয়ে দেবার এক ধরনের পাঁয়তারা হয়তো চলছে নানাভাবে। তার বিশেষ কারণগুলো হলো, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেবার জন্য প্রশাসন থেকে সকল স্থানে দিব্যমান। তিন স্তরের নিরাপত্তার বেষ্টনীতে শত শত পুরষের সামনে নারীদের প্রতি যে অশ্লীলতা প্রদর্শন করা হয়েছে, তার দায়কে অস্বীকার করতে পারে না বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের দায়িত্বরত কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান।
তাই নারীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণের প্রতিবাদকে দমিয়ে না দিয়ে সমাজের সকল মানুষকে এক কাতারে সামিল হয়ে এর প্রতিকার করার পথ খুঁজে বের করতেই হবে। কারণ আজ যদি অপরাধী তার শাস্তি পায় তবে সেটা পুরুষের পরাজয় নয়, বরং সামাজিকভাবে রক্ষা পাবে মানুষের মানবিকতা, নৈতিকবোধ এবং সেইসাথে বাঙালির সংস্কৃতি।