ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিন

সাকিনা হুদা:

মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবর নতুন নয়। শিক্ষকের দ্বারা স্কুল ছাত্রীর ওপর, শ্বশুড়ের দ্বারা পুত্রবধূর ওপর, সহকর্মী বা বসের কাছে অফিসে কর্মরত মহিলাদের ওপর, গৃহকর্তা বা অন্য পুরুষ সদস্যদের দ্বারা গৃহকর্মীর ওপর, পথেঘাটে চলন্ত বাসে যাত্রী মেয়েদের ওপর, আবার কখনও বাড়িতে আপন ভাইয়ের হাতে বোন এবং পিতার হাতে কন্যা সন্তানের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর আর নতুন নয়। এর চেয়ে বেশি বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে আমি কি বলবো, মেয়েরা ঘরে বাইরে কোনখানেই নিরাপদ নয়?

অনেক মেয়ে এই নির্যাতনের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, যৌন নির্যাতনের জন্য মেয়েদেরই দায়ী করা হয়।

আমি ভাবছি, এই যে সেদিন পয়লা বৈশাখের আনন্দ উৎসবে মেয়েরা অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হলো, সেইসব ছেলেরা যখন  চিহ্নিত হবে, তখন তারা আর তাদের বাবা- মায়েরা কী করবেন? তারাও কি আত্মহননের পথ বেছে নেবেন? নাকি ছেলেকে আড়াল করার চেষ্টা করবেন? আইনের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন? আমি জানি এদের কারো বাবা-মা-ই ছেলেকে নির্দ্বিধায় আইনের হাতে তুলে দেবে না। তারা মেয়েদেরকেই দায়ী করবেন। কারণ তাদের ছেলেরা পুরুষ। বাবা যে সুরে কথা বলবেন, মাও সেই সুরে গলা সাধবেন।

আমি জানি, অনেক পরিবারে ছেলেদের শিক্ষা দেয়া হয় শুধুমাত্র একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন অর্জনের জন্য। ছেলে যাতে মাদকাসক্ত না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হয়। কিন্তু ছেলের চরিত্র নিয়ে ভাবে না। মেয়েদেরকে সম্মান করতে শেখান না। তারা মনে করেন, ওটা যৌবনের দোষ। এই দোষ হয়তো তার পিতারও ছিল।

ওটা বংশপরম্পরায় চলতেই থাকবে। সংশোধনের দরকার নেই। এমন অকাট্য যুক্তি যে বাবা-মা পোষণ করে, তাদের ছেলেরা্ই তো মেয়েদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করবে, সুযোগ পেলে গায়ে হাত দেবে, না পারলে মুখে এসিড ছুঁড়ে মারবে,  জোর করে তুলে নিয়ে যাবে। তারপর ছেলেটির বাবা-মা ও সমাজ মেয়েটিকেই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করবে। সমাজে এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে না।

এমন ঘটনাও ঘটে, মাদকাসক্ত ছেলেকে সুস্থ করার জন্য বাবা-মা ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দেন। ছেলে যখন কিছুতেই মাদকমুক্ত হতে পারে না, তখন বাড়িসুদ্ধ লোক সেই বৌটিকে দায়ী করে। আমি এও দেখেছি অনেক উচ্চশিক্ষিত ভালো চাকরি করে এমন ছেলে সুন্দরী মার্জিত রুচির মেয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পরে মেয়েটি আবিস্কার করে, তার যোগ্য স্বামীটির নানা অশালীন আচরণ আর অভ্যাসের কথা। আর ছেলের বাবা-মা মনে করেন, ছেলেদের এমন দু’একটা দোষ থাকতেই পারে। তাই মেয়েটি হয়তো একসময় ডিভোর্স বা আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

এদেশের বাবা-মা মেয়েকে শাসন করেন, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরার জন্য, ভদ্র পোশাক পরে নম্র হয়ে চলার জন্য। যত অশালীন মন্তব্যই তার দিকে ছুঁড়ে মারা হোক না কেন, তা মুখ বুঁজে মাথা নিচু করে মেনে নেবার শিক্ষাই তারা মেয়েকে দেন। অথচ দেশের প্রতিটি কন্যা সন্তানের বাবা-মায়ের উচিৎ মেয়েকে সাহসী দৃঢ়চেতা হয়ে উঠার শিক্ষা দেয়া।

আর প্রতিটি ছেলে সন্তানের বাবা মায়ের অবশ্য কর্তব্য হলো, তার ছেলে বাইরে কী আচরণ করছে, কার সাথে মিশছে তা জানা। সেই সাথে নারীদের প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি তার ভিতরে গেঁথে দেয়া শিশুকাল থেকেই। একমাত্র এইভাবেই প্রতিটি ছেলে ও মেয়ে সন্তানকে বড় করে তোলার মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে নারীর প্রতি সহনশীল সমাজ।

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.