সংসার সামলে নার্সারি ও ক্ষেতেও কাজ করেন ফাতেমা

11103921_10206731966322857_1250684463_n
নার্সারিতে কাজ করছেন ফাতেমা বেগম

উইমেন চ্যাপ্টার: দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও মূলতঃ কৃষিনির্ভর। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সারা বছরই নানা ধরনের চাষাবাদের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। কৃষি পরিবারগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি গৃহিণীরাও চাষাবাদে অংশ নেন। পরিবারের কর্তা বা কৃষক সারাদিন মাঠে কাজ করেন, আর কৃষাণিরা ঘরে বীজ সংরক্ষণ, পশুপালন, মৎস্য চাষসহ নানা ধরনের কাজ করেন। গৃহিণীরা সংসার সামলানোর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে সমান ভূমিকা রেখে চলেছেন।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার তেমনই একজন হলেন ফাতেমা বেগম। তার পরিবারটিকে একটি সফল কৃষক পরিবার বলা চলে। কৃষিকাজের মাধ্যমেই সংসারে যেমন সফলতা এসেছে, সমাজে তাদের কদরও বেড়েছে। দুই সন্তানও এখন পড়ালেখা করছে।

নাম:       ফাতেমা বেগম

স্বামীর নাম:  মো. ইলিয়াছ

উৎপাদিত ফসল:  ফুলকপি, মুলা ও বেগুন ইত্যাদি

অঞ্চল:           চকরিয়া, কক্সবাজার

সহযোগিতাকারী সংগঠন: ইন্টিগ্রেটেড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট

ফাতেমা বেগম বলছিলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন তার সংসারে অর্থকষ্ট লেগেই থাকতো। স্বামী মো. ইলিয়াছ হঠাৎ অল্প বয়সে মারা যাবার পর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দুই সন্তানের পড়ালেখাও ঠিকমতো করানো যাচ্ছিল না। অনেকটা বাধ্য হয়ে তখন ফাতেমাকে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত হতে হয়। স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে প্রথমে অল্প করে চাষাবাদ করা শুরু করেন।  শুরুর দিকে কৃষিকাজে বেশ অসুবিধা হতো।

ফাতেমার ভাষায়, ‘মেয়ে হয়ে একা একা কৃষিকাজ করায় প্রতিবেশীরা নানা ধরনের বাজে মন্তব্য করতো আমাকে। কিন্তু আমি তখন পেটের দায়ে এগুলোতে কান না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকি। কৃষিকাজে সহায়তা করার মতো কেউ ছিল না তখন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইলেও সবসময় তা মিলতো না। এসময় আমি বাড়ির পাশের একটি এনজিওর সাথে যোগাযোগ করি। সেই এনজিও আমাকে নার্সারির প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর নিজেই নার্সারির কাজ শুরু করি’।

ফাতেমা এখন দুই একর জমিতে নানা ধরনের চাষাবাদ করছেন। দুই মৌসুম ধানের চাষ হয়। বছরের অন্য সময়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের নার্সারি ও সবজির চাষ করেন। নার্সারিটি এখন এলাকায় বাণিজ্যিক নার্সারিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও ঘরে হাঁস-মুরগি এবং গরু তো আছেই। ফলে অবস্থার পরিবর্তনও হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। সংসারের স্বচ্ছলতা এসেছে। দুই সন্তানকে পড়ালেখা করাচ্ছেন।

11121796_10206731966402859_1135805275_nসংসারের কাজ সেরে সারাদিন নার্সারি ও সবজি ক্ষেতে সময় দেন, সন্তানরাও মাঝে মাঝে একাজে সহায়তা করে। ফাতেমা জানান, তিনি মাতামুহুরি নদীর তীরবর্তী জমিতে বিভিন্ন জাতের ফলজ ও বনজ চারা লাগিয়েছেন এবং সবজি বাগানে এবার ফুলকপি, মুলা ও বেগুনের চাষ করেছেন।

তবে সময় এতোটা সহজ ছিল না ফাতেমার। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। অন্য কোনো উপার্জনাক্ষম লোক ছিল না। সংসার জীবনের শুরু থেকেই ঘরে বীজ ধান সংরক্ষণ করতেন, হাঁস-মুরগি ছিল। কিন্তু তা দিয়েও সংসার চলতো না। দুই সন্তানের পড়ালেখা  করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে ক্ষেতে কাজ করতে যান। ৫-৬ ঘণ্টা ধরে নার্সারি ও সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করের। নার্সারির চারা সারা বছরই বিক্রি হয় আর এর আয় দিয়ে ভালোভাবেই তাদের সংসার চলে যায়, বলছিলেন ফাতেমা।’

এখন নার্সারি ছাড়াও বর্গা নিয়ে আড়াই একর জমিতে এবছর শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন ফাতেমা। প্রথম দিকে দিনমজুরের বেতন, সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদির খরচ পুষিয়ে লাভ থাকতো কম। পরে নিজে নার্সারি ও সবজি ক্ষেতে কাজ শুরু করার পর দিনমজুরের বেশি দরকার পড়ে না। ফলে লাভের টাকা নিজেরই থেকে যায়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.