আমি লজ্জিত – ধরণী তুমি দ্বিধা হও

Nari n Religionহাসিনা আকতার নিগার: পহেলা বৈশাখ দিনটা আমার আর সবার মতো না হলেও সকাল থেকেই টিভিতে মানুষের বর্নিল সাজসজ্জা আর হাসিমাখা মুখগুলো দেখে মনে মনে আশা করছিলাম – গেলো বছর যেমনই যাক, আসছে বছরটা হয়তো ভালোই কাটবে সবার। রাজনৈতিকভাবেও দেশের দুই নেত্রী মেতে উঠেছিলেন বৈশাখী আনন্দে, যা দেখে আশার আলো সঞ্চারিত হলো মনে।

প্রকৃতপক্ষে  বাঙালী জীবনে পহেলা বৈশাখ একটা অসম্প্রাদায়িক আচার অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বেশ ক’বছর ধরেই। কিন্তু দিনান্তের সূর্যটা ডুবে যাবার আগেই অশুভ এক শক্তি থাবা দিয়ে দিনের সাদা-লালের বর্নিল সাজকে কালো করে দিলো। সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের হাসি আর উচ্ছাসের ছবিগুলি ক্রমশ: ম্লান হয়ে যেত লাগলো। তারপর থেকে কেবল দেখছি বর্ষবরণে সেই হায়নাদের অমানবিক আচরণের খবর।

আর বার বার মনে হচ্ছে চিৎকার করে বলি ‘একি তবে নষ্ট জন্ম।’ এ কোন সমাজে আমাদের বসবাস?  পুরুষ নামের কিছু ইতর প্রাণী মানবিকতা হারিয়ে নারীদের সাথে অশ্লীলতা করে কি প্রমাণ করতে চেয়েছে তারা? তাদের কি একবারও মনে হয়নি, যে নারীদের সাথে এমন আচরণ করছে সে, যদি তার মা, স্ত্রী কিংবা বোন হতো তাহলে আজ সে কী করত?

একজন নারী হিসাবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসাবে  প্রতিবাদ করার দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই ‘ধরণী তুমি দ্বিধা হও’, কারণ মানুষ হিসাবে আজ আমি বড় লজ্জিত আমার সন্তান, বোন, আর ভাইয়ের কাছে।

ঘটনার পর থেকেই দেখছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সকলে যে যার মতো করে দায় এড়াতে চেষ্টা করছে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিয়ে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে ‘নারীরা কেন বাইরে আসবে, তারা তাদের ইজ্জত রক্ষা করতে ঘরে থাকবে’। এটা দিয়ে কী বোঝা যায় না এই জঘণ্যতম কাজটি কারা করতে পারে?

দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে নারী এখন সমভাবে ভূমিকা রাখছে পুরুষদের সাথে। জীবনের প্রয়োজনে সকাল থেকে রাত অব্দি কাজ করে রাস্তা দিয়ে হেটেঁ ঘরে ফিরে পোশাক শিল্পের হাজার হাজার নারী শ্রমিক। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোন একটি জায়গায়, হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, নারী নিরাপদ?

নারীর বস্ত্র হরণ করে পৌরুষ দেখানো সেইসব মানুষরূপী দানবদের ধিক্কার জানাবার কোন ভাষা খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। যখন সোহাগপুরের বীর জননীরা তাদের দুঃস্বপ্নময় সেই ৭১ এর দিনগুলির প্রতিশোধ নিতে পেরে একটুখানি সুখের হাসি হাসছিলো ৪৪ বছর পর,  ঠিক সেই সময়টাতেই  কিছু নরপশু তাদের স্বরূপ প্রকাশ করলো এই বাংলার মা বোনদের ইজ্জত হরণের মতো ঘৃণ্যতম কাজ দিয়ে।

তাই ভারাক্রান্ত মনে নিজেকে নিজে শুধাই ‘তবে কি এই সমাজে এমনি করে নারী হিসাবে বারবার লাঞ্ছিত হবো আমরাই? লজ্জিত হয়নি তো সেই পুরুষ বরং লজ্জিত আমি – একজন মানুষ, একজন নারী হিসাবে।’

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.