অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে…

Pohela 3ইশরাত জাহান ঊর্মি: টেলিভিশনে চাকরি করি ২০০৬ সাল থেকে। তার আগে পত্রিকায় ছিলাম। ভিড়ে-ভাট্টায় গেলে গলায় ঝুলতো পত্রিকার আইডেন্টিটি কার্ড। বিয়ের পর থেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও চড়তে হয়নি। আমি ভাবতাম, দেশ বুঝি অনেক এগিয়ে গেছে। ২০০০ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাঁধনের লাঞ্ছিত হওয়ার মতো ঘটনা এখন বুঝি ঘটেই না! আরে বোকার স্বর্গ! কালকের ঘটনা যতই পড়ছি ততই যেন কেউ জলন্ত শলাকা দিয়ে খুলে দিচ্ছে চোখ।

কাল ড্রাইভারকে বলেছিলাম গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে রাস্তার অপরপাশে গাড়ি রাখতে। কারণ কারওয়ান বাজার আমার অফিস থেকে আদাবর যেতে সোনারগাঁ হোটেলের মোড় ঘুরতেই এক-দেড় ঘন্টা সময় লাগে। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে ওপাশে রাখতে বলি, এই ফাঁকে কাজ সারি অফিসের। পরে ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে ওপাশে গিয়ে গাড়িতে উঠি। কতক্ষণ সময়? পাঁচ থেকে সাত মিনিট। এই হাঁটা পথের মধ্যেও একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। ট্রাকে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে নববর্ষ পালন করতে যাচ্ছে একদল। আরেক দল ট্রাকে চড়ে নাচছে, এই নাচ কোন বাঙালী সংস্কৃতির আমি জানি না। রাস্তায় লাল পাঞ্জাবী পরা অল্প বয়স্ক ছেলেরা। দুএকটা মন্তব্য ছুঁড়ে দ্যায়। আমি সবকথা গায়ে মাখতে হয় না নীতি অনুসরণ করে একরকম দৌড়ে থামিয়ে রাখা গাড়িতে উঠি। আর ভাবনাটা তখনই হয়।

পহেলা বৈশাখে মেয়েদের উপর হামলে পড়া ছেলেগুলোর কথা ভাবি শুয়োরের খামার থেকে উঠে আসা জানোয়ারগুলো নাকি ছাত্রলীগ করে। লাকী আক্তারের পোস্ট থেকে জানতে পারি সোহরাওয়ার্দী গেইটে ওরা নাকি মেয়েদের বিবস্ত্র করেছে, উত্যক্ত করার সেসব ছবি ভিডিও করেছে। মেয়েদের চিৎকার যাতে কেউ শুনতে না পায় সেজন্য উচ্চস্বরে বাজিয়েছে প্লাস্টিকের বাঁশি।

Urmi ATN
ইশরাত জাহান ঊর্মি

কালকেও পুলিশ বাহিনীর জন্য আমার মায়াই হয়েছিল। সবাই যখন আনন্দ করে তখন পুলিশ আর সাংবাদিক বেচারীদের থাকতে হয় টানটান। মনে হয়েছিল, এরকম বড় আয়োজন শেষ হলেই বুঝি দম ফেলে বাঁচবে তারা এবং আমরা। কিন্তু আজ আর সেই মায়াটা বোধ করছি না। নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই এরকম ঘটনা ঘটেছে, আর তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। তাহলে আর নিরাপত্তার ঢাক-ঢোল পেটানো কেন? বলে দিলেই হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বা বৈশাখী উৎসবে আসবে যারা, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরই।

কাল ভোর থেকে চারুকলার সামনে দায়িত্ব পালন করার কথা মনে করে, আর এই ঘটনার কথা পড়ে আমার মনে হলো, হাতে মাইক্রোফোন থাকে বলেই অনেক বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় না। তার মানে এই নয় যে, এই ঘটনাগুলো ঘটে না। ঘটে কিন্তু অন্তরালে রয়ে যায়।

কাল মেয়েদের উত্যক্ত করেছে যারা তাদের সাথে আমাদের সংস্কৃতিকে পছন্দ না করা, বাংলাদেশকেই মানতে না পারা জামায়াত-শিবিরের পার্থক্য কোথায়? এইবার তাই ভয়েস রেইজ করতেই হবে।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার শ্লোগানটা বড়ই সময়োপযোগী, ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’। যে ছেলেগুলো ‘আমরা সবাই মুজিবসেনা’ বলে শ্লোগান দেয়, কাণ্ডটা যদি তাদেরই হয়, তবে বলতেই হবে, শুধু অন্ধকার নয়, এ যে ঘোর অমানিশা!

সাংবাদিক ও লেখক

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.