লীনা পারভীন: পহেলা বৈশাখের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর উপর হামলা (এখানে আমি ‘শ্লীলতাহানি’ বলছি না কারণ নারীর ‘শ্লীলতা’ এত সহজে কেউ চাইলেই হানি ঘটাতে পারেনা)- এরকমই একটা খবর চোখে পড়েছে। খবরের বর্ণনা পড়ে প্রথমেই আমার কাছে মনে হয়েছে এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না।
পহেলা বৈশাখের দিনে এরকম ঘটনা এর আগে ঘটেছে বলে আমার অভিজ্ঞতায় নেই, তাও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। আমি মনে করি, এটা খুবই পরিকল্পিত ঘটনা হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এ ধরনের সার্বজনীন উপস্থিতিকে বিতর্কিত করতে পারলে, মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারলে, এক ধরনের সাফল্যই তো বটে!

এখানে লক্ষণীয় যে পহেলা বৈশাখে নারী এবং শিশুদের উপস্থিতি সবসময় বেশি থাকে এবং অন্তত এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য কাউকে কোন রকম নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয় না। এখানে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে আসে না, সবাই তার পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে উদযাপন করে থাকে। এখানে কেউ কারো কোন পরিচয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে না।
আমাদের দেশে তিন ধরনের উৎসব পালন করা হয়। একটি ধরন হচ্ছে রাজনৈতিক উৎসব (শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এইগুলি), আরেক ধরণ আছে ধর্মীয় উৎসব ( ঈদ, পুজা, পার্বন, বড় দিন ইত্যাদি), আর তৃতীয় ধরনের উৎসব হচ্ছে সাংস্কৃতিক উৎসব, যেটি আমাদের পহেলা বৈশাখ বা বাংলা বছরের প্রথম দিন, যা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিংগ নির্বিশেষে সবাই পালন করে এবং এটি কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের উৎসব নয়। এখানে কেউ কাউকে নিমন্ত্রণ করে না। এটি সবার উৎসব।
আর ঠিক এই উৎসবকে এক ধরনের ধর্মীয় নামকরণের চেষ্টা নতুন নয়। চলছে মুক্ত চিন্তা, মুক্ত ভাবনার উপর আঘাত। এখানে পহেলা বৈশাখ একটি বিরাট ভূমিকা রাখে আমাদের বাংগালীদের মুক্তমনা চরিত্রকে ধরে রাখতে।
তাই এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে উড়িয়ে দেয়া চলবে না। শক্ত হাতে এর উপর আঘাতকে ঠেকাতে হবে। এ কেবল কয়েকজন নারীর উপর আঘাত মনে করি না। নারীরা অনুষ্ঠানে না এলে আর এরকম ঘটনা ঘটবে না এই ধারনা যেন আমাদের ভিতর কোনভাবে ইনজেক্ট করতে না পারে, তাই দরকার সবার প্রতিবাদ।
শক্ত হাতে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মুক্ত চিন্তা, মুক্ত ভাবনা, মুক্ত চলাফেরাকে যদি একই সাথে আঘাত করার যায় তাহলেই বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়া সম্ভব। আমরা কি তাই চাইব? না চেয়েছি কখনো? প্রশ্নের উত্তর নিকেই ঠিক করতে হবে।