কেমন হওয়া উচিত ডিসিসি

DCCমাহমুদা চৌধুরী: সত্তর দশক পর্যন্ত ঢাকার পরিধি ছিল ছোট। জনসংখা ছিল দেড় লাখ। ফুলবাড়িয়া রেললাইন থেকে লাইন টানলে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত পুরান ঢাকার বিস্তৃতি। রেললাইনের ওপারে ঝকমকে গুলিস্তান থেকে উত্তরে পল্টন, রমনা শান্তিনগর, ইসকাটন গার্ডেন মগবাজার তেজগাঁ ধানমন্ডিকে মনে করা হতো অভিজাত এলাকা। নতুন ঢাকা।

আজ ২০১৫ তে দাঁড়িয়ে ঢাকার জনসংখা দেড় কোটি। ঢাকার আশেপাশের প্লাবন ভূমি খাল বিল নদী নালা ড্রেন – সব ভরাট করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। তাতেও বাসস্থানের চাহিদা মিটছে না।
সংকট মোচনে উঠছে আকাশভেদী অট্টালিকা। আগে যেখানে তিন ,পাঁচ ,দশ কাঠা বা এক বিঘায় বসত করতো দু থেকে আট পরিবার এখন সেখানে সত্তর আশিটা ফ্লাট বাড়ি। আগের দিনে মোহাম্মদপুরে গেলে বলা হতো, ঢাকা থেকে মেহমান এসেছে।
এখন মিরপুর ছাড়িয়ে হেমায়েতপুর, টঙ্গি উত্তরা নামে, পূবদিকে ধনিয়া চিটাগং রোড, পশ্চিমে বসিলা ও উত্তরে কামরাঙি চর পর্যন্ত ছড়িয়ে ঢাকা। এই বিশাল নগরের প্রাথমিক শিক্ষা-স্বাস্থ্য- পরিচ্ছন্নতা – পয়নিস্কাষণ- সড়ক- ফুটপাত- সড়ক বাতি ইত্যাদি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন।

এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ পদের নাম ‘মেয়র’।
ভালবেসে মেয়রকে নগরপিতাও বলা হয়ে থাকে।
দীর্ঘ ইতিহাসের ধারা অনুসারে ডিসিসি দুর্নীতিগ্রস্ত, মেদে জরাগ্রস্ত, অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কথিত যে ডিসিসির প্রতিটি ইট হা করে থাকে টাকা গেলার জন্য।
টাকার ভাগাভাগি হয় এ টু জেড পর্যন্ত।

নগর সুবিন্যাসের জন্য ডিসিসি এর আওতায় ঢাকাকে প্রায় একশ’ ওয়র্ডে ভাগ করা হয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দেখভাল করার জন্য রয়েছেন নির্বাচিত কাউন্সিলার। নির্বাচিত মেয়রের অধীনে তারা কাজ করেন। প্রতি পাঁচ বছর পরপর জনগন ভোট দিয়ে মেয়র -কাউন্সিলর নির্বাচনের বিধান থাকলেও গত পয়ত্রশ বছরে নগরবাসী ভোট দিয়ে নগর পিতা নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছে মাত্র দুবার।

সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার চর্চার সুযোগ।
ঢাকার আয়তন যখন ছোট ছিল- পৌর করপোরেশন নামে যে সেবা নগরীর বাসিন্দাদের দেয়া হতো আজ বিশাল দূর্গাকৃতির নগর ভবনে রাজকীয় সিংহাসন সম-আসনে আসীন নগরপিতার কাছ থেকে মিলছে না।
অথচ নাগরিক সেবার নামে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়। যত বাজেট বাড়ে, তিলোত্তমা ঢাকার শ্রীহীন চেহারা আরো দুর্দশাগ্রস্ত হয়। মেয়র কাউন্সিলর প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারি সকলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার হয় না।

এরকম অব্যবস্থার মধ্যেই ডিসিসি দুভাগ হল। উত্তর এবং দক্ষিণ। দুভাগে দুজন মেয়র।

প্রশ্ন হলো, জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা নাহলে কাঙ্খিত নাগরিক সেবা কতটুকু মিলবে? কিংবা ঢাকার মলিন শ্রীহীনতা কি ঘুচবে?

পরিশিষ্টে একটা সুপারিশ: ঢাকা এখন বিশাল। এক একটা ওয়ার্ডে স্থান ভেদে দু থেকে চার লাখ মানুষের বসবাস। যা সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখার প্রায় সমান। এই হিসেবে ঢাকার প্রতি ওয়ার্ডকে করপোরেশন করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষুণি নাহলে আরেকটা অপশন ভাবার অবকাশ রয়েছে। যেমন মিরপুর, উত্তরা, মিজমিজিকে উপশহর ঘোষণা দিয়ে ঢাকা থেকে ছেঁটে ফেলা যায়।

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.