কর্মজীবী মা এর আবার ছুটি!

Worlloadআয়শা আক্তার কণা: একটা ছুটি পেয়েছি! টানা ছুটি…মনে হচ্ছে ছুটি কি অনেকদিন পর সেটা এবার কিছুটা বুঝতে পারবো।

এভাবে বলার কারণও আছে নিশ্চয় কিছুটা। আমার ধারণা, আমরা যারা কর্মজীবী মা, তাদের জীবনে কী আসলে ছুটি বলে কিছু আছে? আমি সন্দেহ নয়, জোর দিয়েই বলছি, আমাদের কোন ছুটি নেই। আমার কোন ছুটি নেই আসলে। বিশ্বাস না করলে আসুন, একটু বিস্তারে যাই তবে…

সাপ্তাহিক ছুটির দিন মানে… জমে থাকা কাজের এক এক করে সমাধান করা…সন্তানের পড়াশোনার ফলো আপ, সংসারের অন্যদের জন্য আরেকটু যত্ন নেয়ার জন্য মনোযোগী হওয়া, কেনাকাটা জাতীয় জিনিসের ফর্দ তৈরি করে জ্যাম ও গরম ঠেলে মা দুর্গার মত শেষ নামানো।

মা-ভাই-বোনদের (দুই পক্ষের জন্যেই নারীই নির্ধারিত যেহেতু) জন্য অবশ্যই করনীয় কাজগুলির খবরা-খবর নিয়ে তাতে নিজের গ্যাপ চিহ্নিত করে লজ্জা পাওয়াসহ মান ভাঙ্গানোর জন্য আরো গভীর মন দিয়ে সম্পন্ন করার চাপ; ডাক্তার, ঔষধ, টেস্ট জাতীয় কাজগুলি যথারীতি কারও না কারোর থাকবেই, সেগুলোও সরিয়েও রাখি আমরা এই সাপ্তাহিক ছুটির দিনটায় করার জন্য।

এছাড়াও থাকে কিছু মানুষের বাসায় যেয়ে দায়িত্ব পালন ও নিজের বাসায় ডেকে আবারো দায়িত্ব পালনের কাজ…যা এই ছুটির দিনের জন্যেই বরাদ্দ রাখি। সুতরাং ঐ দুইদিনে দেখা যাচ্ছে আরো অতিরিক্ত ও যাবতীয় কাজ আমাদের করার জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়, কম বেশী প্রায় সকল নারীকেই এসব করতে হয়। সেটা সরাসরি বা সাহায্যকারী যা দিয়েই করি না কেন, চালা্কের সিটে আমাকেই বসতে হয়। ড্রাইভিং সিটে থাকি বলে এক মূহূর্তের জন্যেও রানিং গাড়ি থেকে চোখ সরাতে পারি না। নারী আমি, আমাকেই করতে হবে, কোন মাফ নাই, তাহলে…

অনেক ক্লান্ত হতে হতেই রবিবার আসে এবং আবারো অফিসে দৌড়…

মাঝে মাঝে আমরা অফিস থেকে “ছুটি” বলে ছুটি নেই,কিন্তু ঐ ছুটিটা থাকে ঘরের কাজের পাশাপাশি আরো কিছু কাজ সম্পন্ন করার জন্যই; মানে অতিরিক্ত কাজ আসে যখন-তখন আমরা ছুটি নেই… কাজই যদি করি তাহলে ছুটিই বা বলি কেন!  এবং ছুটি কাটিয়ে যখন কর্মক্ষেত্রে ফিরি, সবারই ভাব এমন থাকে, অনেক বিশ্রাম করে ফিরেছেন, এবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।

সত্যি বলতে কি আমরাও এমনই ভাবি। বুঝি না বলেই ধরতে পারি না, অবসন্ন শরীরের কারণে কুন্ঠিত হই, মনে জোর এনে কাজএ নেমে পড়ি ফুল সুইং এ। দেখা যায় বেশীর ভাগ নারী সহকর্মী ঠিকঅফিস আওয়ার শেষ হলেই এক সেকেন্ডও দেরি না করে বাসার দিকে রওনা হয়। কারণ ঘরে অপেক্ষা করে আছে সমান চাপের কাজ… অনেকগুলো মুখের দায়িত্ব।

কিছু পুরুষ কলিগ ঠোঁট বাঁকায়, জেনেও না জানার ভান করে অপেশাদারি মন্তব্য করেন, চাকরীতে প্রমোশন আটকে দেন কিংবা আরো বাজে কাজ করেন। কিন্তু আমার ধারণা তারা নিশ্চিতভাবেই জানেন, এই নারীরা কেনই বা ছুটছেন… রোবটের মতই।

এবার আসি এককালীন কিছু বড় ধর্মীয় ছুটির কথায়। বড় ছুটি মানে আরো বড় যজ্ঞ। ঘর পরিস্কার,দোড় পরিস্কার,মন পরিস্কার, জন পরিস্কার…

ছুটিতে বাসায় থাকলে নানা ফিরিস্তি, নানান দায়িত্ব, নানা বড় বড় আয়োজন…

এসব শেষে ছুটি শেষ হয় একসময়ে। বলেই ফেলি তাই প্রায়শই “এতোকষ্ট জীবন নষ্ট”।

আবার যদি যাই কোথাও বেড়াতে! সেতো আরও ঝক্কিপূর্ণ। মাঝামাঝি আয়ের মানুষের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা !! এককথায় ভয়াবহ…

… জ্যাম, যাতায়াত,গাড়ী বা হোটেল ভাড়ায়উদার হতে না পারার জন্য আনন্দময় ভ্রমন প্রথমেই হয়ে ওঠে যুদ্ধের মতই। এসবেরকারণে ফেস করতে হয় মানুষের অপেশাদারী আচরণ, টিমের বাকিদের হারেরেরে মুডের সাথেএডজাস্টকরণ। ফলে যতটুকু সময় বরাদ্দ থাকে তা কখন যে ফুড়িয়ে যায় টের পাইনা। উপরন্তুবাসায় ফিরে যেই কর্মস্তুপ অপেক্ষা করে থাকে সেটার দুশ্চিন্তাওমাথায় উঁকি দিতেই থাকে ওখানে থাকতেই। ছুটি শেষে সেই কর্মস্থলের চিন্তা,এসাইনমেন্ট, বসের ভাবের চেহারা… এসব “একটা কিনলে ৩টা ফ্রি’র মত করে আসতেই থাকে মাথায়…

আরেক ভিন্ন জগৎ …

এভাবেই চোখের পলকে শেষ হয় আমাদের আনন্দ ভ্রমণের পর্ব…

একসময় মেয়াদ শেষ… দে ছুট গন্তব্যে

আবারো দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় ফিরেই কোমরে আচঁল দিয়ে ঘরের ধূলা পরিস্কার, খাবার-দাবারের বন্দোবস্তসহ আরেক জমে থাকে পাহাড় পরিমাণ কাজের মুখোমুখি হওয়া। বেড়ানো বা ছুটি কোথায় আসলে!

সুতরাং সবই তো ফুড়ুৎ…

আমার ছুটি চাই। ফটিকের মতো ছুটি না… একটা টানা ছুটি, বাসায় স্বাধীন/দায়-দায়িত্বহীন হয়ে থাকার মত ছুটি…

তবে মাঝে মাঝে…

তখন যেন, খাবারের জন্য টেনশন নেই, খাওয়ানোর জন্য টেনশন নেই, কে আসলো কে গেলো দেখলাম না তখন….

নেই অন্যের নানান ফিরিস্তি, নানান দায়িত্বের বেড়াজাল

হয়তো ঘুমাবো, নয় মুভি দেখবো, সারাদিন জোরে জোরে গান শুনবো, এর-ওর বাসায় যাবো বা প্রিয় মানুষদের সাথে দারুণ কিছু আড্ডা দেবো…. ম্যারাথন আড্ডা…..

এসব না করে আর কিছুও করতে চাইলে তাও করবো…

ছেলে-ঘর-বর-মা-বন্ধু-ননদ-ভাসুর-প্রতিবেশী আর অফিস… ওদেরকে ঐ ক’দিনের জন্য ভুলে যাবো, কাউকেই জায়গা দিবো না…

অনেকগুলো বছরের এই আমি কেন চাইলেই ৮/১০ দিন আমার মত করে পাবো না…

ছুটি মানে আক্ষরিক অর্থের ছুটি… আমি অপেক্ষা করছি সবচেয়ে প্রিয় সেই ছুটির জন্য। যেটা পেয়েছি সেটা আক্ষরিকভাবে উপভোগ করতে পারবো,

নাকি পারবো না…!!!!!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.