বিশ্বাসের ভাইরাস অনেক ছড়িয়েছে, এবার সময় অ্যান্টিডোটের

Pandora Boxসারিতা আহমেদ: আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল আমার নতুন স্কুলে । প্রায় দু’বছর আগে আমার পুরোনো স্কুলেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছিলাম। আজ আবারও। সেই একই ক্লাশ এইটে। কো-এড বা সহশিক্ষা স্কুল আমাদের। সেকেন্ড পিরিয়ড শুরু। ইংলিশ। পড়াতে পড়াতে ব্যাখ্যা দিতে দিতে নানা গল্পের অবতারণা করা আমার স্বভাব। তো আজও ইংলিশ টেক্সট এর একটা বিষয় আলোচনা করতে করতে আগের সিলেবাসের পাঠ্য Pandora’s Box গল্প টেনে আনলাম।

যারা জানে না তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, গল্পটি এইরকম —

” সে অনেক কাল আগের কথা । পৃথিবীতে তখন কোনও দুঃখ, কষ্ট , যন্ত্রণা ছিল না। সবাই খুব আনন্দে থাকত। মানুষের মধ্যে কোনও ঝগড়া-হিংসা-দ্বেষ ছিল না। সকলে আনন্দে একসাথে সুখেই বাস করত। মোট কথা পৃথিবী একটা রূপকথার দেশ ছিল । সেই সোনাঝরা দিনে ঈশ্বর / GOD দুজন ছোট ছেলে মেয়েকে ধরাধামে পাঠালেন। ছেলেটির নাম এপিমিথিউস এবং মেয়েটির নাম প্যান্ডোরা। তাদের বয়স ১২- ১৪ বছর। প্যান্ডোরা হল সবচেয়ে ছোট। তাদের সাথে পাঠালেন একটি সুন্দর লোভনীয় বাক্স। বাক্সের কিন্তু কোনো তালা ছিল না। শুধু একটি সুন্দর কারুকার্য করা ঢাকনা ছিল। বাক্সটি পাঠানোর সময় গড আদেশ দিয়েছিলেন বাক্সটি কখনো যেন তারা না খোলে। যদি খোলে তাহলে পৃথিবীতে প্রলয় আসবে। তো এই ছোট দুই বন্ধু গডের আদেশকে শিরোধার্য করে বাক্স নিয়ে পৃথিবীর বাড়িতে এল। বয়সে ছোট বলে প্যান্ডোরার খুব ইচ্ছে ছিল বাক্সটির মধ্যে কি আছে তা জানতে। এপিমিথিউসও যে অনাগ্রহী ছিল, তা নয়। সেও সমান আগ্রহী ছিল বাক্সের রহস্যভেদে। কিন্তু ওই গডের আদেশ…কিভাবে তা তারা লঙ্ঘন করে! তাই এপিমিথিউস নিজের ইচ্ছেকে চেপে প্যান্ডোরাকে বারবার সাবধান করতে লাগে যেন কোনোদিন ভুলেও বাক্স না খোলা হয় , নইলে পৃথিবীতে গডের অভিসম্পাত নেমে আসবে। প্যান্ডোরা মেনে নিলেও বারবার সে ভাবে হয়তো বাক্সে সুন্দর কোনো খাবার আছে ,বা খেলনা আছে বা পোষাক আছে বা নানা রকমারি দ্রব্য আছে। কিন্তু সাহস করে কিছুতেই বাক্সের ঢাকনা সে খুলতে পারে না। এদিকে বাক্সের তালা-না থাকা আর তার উপরে সুন্দর সুন্দর মুখের ছবি, ফুল-লতাপাতার ছবি ইত্যাদি দেখে প্যান্ডোরা ভীষন আকর্ষণ অনুভব করে বাক্স খোলার জন্য । কিন্তু ওই গডের আদেশ আর এপিমিথিউসের কড়া নির্দেশ … এই করে করে একদিন হঠাৎ বাক্স থেকে সে কিছু আওয়াজ শুনতে পায়।

কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে আর বলছে, ‘আমাকে বের কর প্যান্ডোরা’। ‘আমাদের মুক্তি দাও প্যান্ডোরা ‘

— এই আওয়াজে প্যান্ডরা দিশেহারা হয়ে বাক্সের ঢাকনা সরিয়ে ফেলতে উদ্যোত হল। আর তো কৌতুহল চেপে রাখা যায় না । ঠিক সেই মুহুর্তে এপিমিথিউস দরজার আড়াল থেকে মেয়েটির কাণ্ড দেখতে লাগল কিন্তু যেহেতু সে নিজেও বেশ কৌতুহলি ছিল তাই সে প্যান্ডোরাকে বারন করতে বা আটকাতে পারল না । এদিকে বাক্স খোলার সাথে সাথেই সারা পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল , তার সাথে বাক্স থেকে কী যেন সব বেরিয়ে এপিমিথিউসকে কামড়ে দিল । সে যন্ত্রনায় ছটফট করে উঠল ” প্যান্ডোরা তুমি একি করলে। আমায় কে যেন কামড়ে দিল। প্রচন্ড ব্যাথা করছে।”

প্যান্ডোরা দিশেহারা। সে বুঝতে পারল এক বিশাল ভুল সে করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে বাক্স বন্ধ করল এবং আবার ঘরে আলো এল। এবার সে এপিমিথিউসের দিকে চাইল ও দেখল সে বিষে নীল হয়ে গেছে।

এর পরপরেই সে বাক্স থেকে আরেকটা আওয়াজ শুনল ” আমায় বের কর প্যান্ডোরা । আমি তোমাদের শান্তি দেব । আমায় বিশ্বাস কর ।” অনেকটা অবিশ্বাস নিয়েই প্যান্ডোরা আবার বাক্সটি খুলল । এবার তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক সুন্দর পরি । সে তার জাদুদণ্ড দিয়ে এপিমিথিউসের ক্ষতস্থানে বুলিয়ে দিল ও তার সব যন্ত্রনার অবসান ঘটল । এরপর পরিটি তার পরিচয় দিয়ে বলল, “আমি আশা ( Hope ) . তুমি এর আগে বাক্স খুলে যেসব দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনাদের পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছ, আমি সেগুলোকে সহ্য করার ক্ষমতা দেব । আমায় মনে করেই তোমরা এ দুনিয়ার সব দুঃখ থেকে মুক্তি পাবে ।এই বলে আশা বা Hope পৃথিবীর বুকে উড়ে চলে গেল । তবে থেকে আমরা সব দুঃখ কষ্ট গুলো আশার আলোয় ভুলে থাকতে চেষ্টা করি ।”

——– গল্পটি বলার পরে দেখলাম আমার স্টুডেন্টরা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছে ।

এবার শুরু হল প্রশ্নত্তর পর্ব ।

আমি — ” আচ্ছা গল্পটা থেকে কি বুঝলে ? দোষটা কার ছিল ?

ওরা — “প্যান্ডোরার,  মিস।”

— “কেন ?”

— “ওই তো সব দুঃখদের ছড়িয়ে দিল সারা দুনিয়ায়।”

— “আচ্ছা বেশ। এবার বলতো, বাক্সটি পাঠিয়েছিল কে?”

— “গড।”

— ” হুম। আচ্ছা , একটু অন্যভাবে উদাহরণ দিই । ধরো তুমি বা তোমরা মামাবাড়ি গেছ। সেখানে গিয়ে খুব মজা করছ । সেই মামাবাড়িতে তোমার মামি বা অন্য কেউ তোমায় একটা টিফিন বক্স দিয়ে বল্লেন ‘আমি না বলা অব্দি এই ঢাকনা কিন্তু খুলবে না ।’  তো তোমাদের কি একবারো মনে হবে না কী আছে ওই টিফিন বাক্সে ? চকলেট ? মিস্টি নাকি দারুণ একটা মোবাইল ফোন ! কী এমন সারপ্রাইজ ? মনে হবে না , সত্যি করে বলোতো ?”

—- “হ্যাঁ মিস। মনে তো হবেই। ” একজন আবার বলল, “আমি তো খুলেই ফেলব মামী যাওয়ার সাথে সাথেই।”

—- “আচ্ছা। তাহলে বলতো এরম মনে হওয়াটা কি পাপ? অন্যায় ? প্যান্ডরা তো তোমাদেরই বয়সি মেয়ে। বন্ধু বলা যায়। তাই না?”

—- “হ্যাঁ মিস। এরম তো মনে হতেই পারে।”

— “তাও দেখ ও কিন্তু লোভে পড়ে বাক্স খোলেনি। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় ছিল গডের আদেশের। কিন্তু ওই বক্সে যখন নানা রকম আওয়াজ বেরোতে শুরু করল তখন সে আর পারল না। তোমরা কি পারতে চুপ থাকতে ?”

—” না নাআআআআআআ …মিস।”

— ” ওকে। তো দেখ, যিনি বাক্সটা পাঠালেন তিনি যদি জানতেনই যে এটা দুঃখের বাক্স , তাহলে কেন পাঠালেন ? আর যদি তিনি পাঠালেনই তাহলে তালা দিলেন না কেন ? একটু ভাবো , তার মানে কি এটা নয় যে পৃথিবীর সুখ শান্তি যাতে নষ্ট হয় তার জন্য গড অনেক আগেই একটি কন্সপিরেসি বা ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং সেটা যাতে ওনার নিজের হাতে না ঘটে একজন মেয়ের দ্বারা ঘটে সেই মত তিনি প্ল্যান করেই এই দুই শিশুকে তার অশুভ খেলায় ঘূঁটি বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন । তাই না কি ?”

—- ” হুম মিস । এটা তো একদম ঠিক ।” অনেকে চুপ থাকলেও বেশ কয়েকজন এরকম বলল ।

“কিন্তু মিস, গড তো ভালো । উনি তো আমাদের মঙ্গলের জন্যই সব করেন , তাই তো জানি । …কিন্তু  …  এটা কিরম হল …… ” ওরা যে বেশ চিন্তিত এটা বোঝাই যাচ্ছিল।

—- ” বেশ , এবার দেখ , গড কিন্তু জানতেন মানুষের কৌতুহল অপরিসীম। আবার তোমরা নিশ্চয় নানা পূজা-পার্বনে- বাড়িতে -ধর্মের গল্পে জেনেছ যে গড বা ঈশ্বরের আদেশ ছাড়া নাকি পৃথিবীতে একটা গাছের পাতাও নড়ে না। তো এখানে দেখ, তাঁর ইচ্ছেতেই ওই দুজন দুনিয়ায় এল।  তাঁর ইচ্ছেতেই বাক্স এল তালা ছাড়া, লোভনীয় সব কারুকাজ সহ । তাঁর ইচ্ছেতেই প্যান্ডরা ও এপিমিথিউস দুজনের মনেই অদম্য কৌতুহল এল বাক্সের রহস্য উদ্ধারে। তাঁর ইচ্ছেতেই বাক্সের ভেতর থেকে নানা আওয়াজ বেরুতে লাগল এবং তাঁর ইচ্ছেতেই শেষমেশ বাক্সটি খুলল প্যান্ডরা এবং কষ্টগুলো পৃথিবীতে মুক্তি পেল। এখানে প্যান্ডোরা তো জাস্ট একটা খেলার ঘুঁটি — তাহলে বলতো প্যান্ডোরা কি আদৌ দায়ী এই কাজে?”

— ” নাআআআআআআআআআ নাআআআআআআ ।”

—- ” তাহলে কে প্রধান দোষী এই সমস্ত অপকাজে ? একটু ভেবে নিজের মত করে বল দেখি ।”

— “গড”। পেছনের বেঞ্চ থেকে উত্তর এলো । বাকিরা পিছন ফিরল এবং এর পরে সকলে সমস্বরে চেঁচিয়ে বলল  “প্যান্ডোরা নয় , গড দায়ী ।”

—- ” তাহলে বলোতো  আমাদের মধ্যে যদি কেউ বিভেদ লাগানোর চেষ্টা করে, আমাদের মনকে বিচলিত করে তাকে কি আমাদের বিশ্বাস করা উচিৎ ?”

—–” নাআআআআআ মিস ।” একসাথে ৪৫ জন চেঁচালো ।

— “তাহলে এই সামান্য গল্প থেকে আমরা কি শিখলাম, আমাদের কাকে বিশ্বাস করা উচিৎ না ?”

একটু কনফিউজট দেখালেও কেউ কেউ সাহস করে বলল ” গডকে !”

— ” কীসের ভয় ? যা মনে হচ্ছে বল । ”

— “গডকে, মিস । ঈশ্বরকে, মিস । ভগবানকে মিস । আল্লাহকেও মিস ।” সারা ক্লাশে যে যাকে উপাসনা করে তার নাম ধরে উত্তর দিতে লাগল ।

—- ” ওকে। আচ্ছা এবার বলতো , তাহলে কাকে বিশ্বাস করে আমরা ঠকব না ? দেখি কে বলতে পারে ?” হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করি ।

কারুর মুখে কথা নেই । সবাই ভাবছে । কাকে ? কাকে ? কাকে ??

ঘড়ি দেখলাম , পিরিয়ড শেষ হতে চলেছে । ছোট্ট একটা চক নিয়ে বোর্ডে লিখলাম ‘ GOD ?’

—- “না মিস, গডকে নয় ।”

— “আচ্ছা , এবার দেখ তো । ” বলে Word টাকে উল্টে লিখলাম ‘ DOG .’ কী? … ডগ মানে জানো তো ? একে বিশ্বাস করা যায় তো ?

—- হ্যাঁআআআআআআ হ্যাঁআআআআআআ … … সারা ক্লাশ ফেটে পড়ছে ৪৫ জনের কোরাসে ।

“মিস, আরো বলুন  । আরো একটা গল্প । প্লিজ … ”

ঘন্টা পড়ে গেল । ঢং ঢং চাপা পড়ে গেল ওদের মিলিত কণ্ঠস্বরে । আমার আজকের মিশন সাকসেসফুল, বেশ বোঝা গেল ।

ক্লাশ থেকে বোরোনোর আগে বললাম, ‘নিশ্চয়, আরো অনেক কিছু বলব তোমাদের ।’

— “কবে, মিস ?”

—” আজ নয় , পরে ।”

বেরিয়ে এলাম ক্লাশ থেকে ।বাইরে থেকে শোনা গেল ওদের হাততালি । কী ভীষণ এক জগদ্দল ধারণা আজ একটু হলেও নড়েছে । এটা জানি না ওরা কতটা অনুভব করল, আমি করলাম।

আমি কি একটু একটু করে পপুলার হচ্ছি ? কে জানে ?

পপুলারিটি পাওয়া আমার লক্ষ্য নয় , ছিলও না কখনো । একজন শিক্ষিকা হিসেবে আমি ওদের মনের সংকীর্ণতাগুলোকে নাড়াতে, সরাতে চাইছিলাম। ওদের শিশু মনের কোমল অথচ ভীষন ছোঁয়াচে বিভ্রান্তিগুলোকে সারাতে চেয়েছি মাত্র।

কাগজে দেখছি কিভাবে মাদ্রাসাগুলোয় ছাত্রছাত্রীদের ব্রেন ওয়াশ হচ্ছে ঈশ্বর প্রেমের প্রতি। অবিশ্বাসীদের কোতল করার প্রতি কিভাবে আকর্ষিত করা হচ্ছে তাদের। নাস্তিকদের লাশ ফেলে দেওয়াকে ‘ঈমান পাওয়ার ‘ এক অভ্রান্ত পথ হিসেবে শুধু বর্ণনাই করা হচ্ছে না , রীতিমত ট্রেনিং দিয়ে মস্তিষ্কের কোষে কোষে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ১২-১৩ বছর বা তারো কম বয়সেই ।

‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ এভাবে কিছু শিক্ষক নামধারী  পিশাচের মাথা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের মাথায় । তারা বই ফেলে বোমা বাঁধছে সারা দুনিয়া জুড়ে। শান্তির ধর্মের নামে অশান্তি , সন্ত্রাস এর বীজ বপন করছে। রক্ত স্রোত বইছে বিশ্ব জুড়ে। একটা অসম অঘোষিত যুদ্ধে কেবল সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। ওরা একে ডাকছে ‘শক থেরাপি’ নামে ।

আমি, মোম মিছিলে হাঁটতে, শোকসভায় মাথানত দাঁড়াতে বিশ্বাসী নই। তাই আর কিছু পারি না পারি , নাহয় এই অসম যুদ্ধে  আরেকটা ‘শক থেরাপি’ সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারি তো। একটা অ্যাণ্টিডোট বানাতে পারি তো। হয়তো এটা এমন কিছুই নয়। একা এইভাবে সাড়া জাগানোর কিছুই হবে না হয়তো , তবু দিনের পর দিন যদি এমনভাবে পুঁথিগত বিদ্যের বাইরে কিছু অবিশ্বাসী তৈরীর চেষ্টা করি… ক্ষতি কি?

ক্ষতি যা হওয়ার সেতো হচ্ছেই দিন দিন । মানুষ প্রতিদিন অন্ধ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে , নাহয় একটু হাত বাড়ালাম ওই ছোট ছোট শিশুদের মনটাকে অন্ধকার থেকে টেনে তোলার জন্য । ওরা ভাবুক , চিন্তা করুক, প্রশ্ন করুক , চিৎকার করুক, প্রতিবাদ করুক ।

জানি , আমরা থাকব না সেই আলোকিত প্রভাতে যেদিন হয়তো এরা আরো কিছু মানুষকে ঠিক এই ভাবেই একটা গল্প বলবে। একটু অন্য আঙ্গিকে একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে। সেদিন আমি মরেও শান্তি পাব ।

ইউটোপিয়া ?? না হয়, তাই ।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.