উইমেন চ্যাপ্টার: প্রথম নারী হিসেবে সামরিক পাইলটের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ফ্লাইং অফিসার তামান্না রহমান। সেদিন নিজেকে সৌভাগ্যবতী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিদিন সইলো না সেই সৌভাগ্য।
মাত্র সাড়ে তিন মাস যেতে না যেতেই তামান্নার সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল। সামরিক নারী পাইলট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আগেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিল এই সাহসী পাইলটের জীবন।
বুধবার (১ এপ্রিল) রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমান বন্দরের রানওয়েতে প্রশিক্ষণকালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না। এ ঘটনায় প্রশিক্ষক সাইদ কামাল দগ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে ইতিহাস গড়া দুই নারী কর্মকর্তার অন্যতম ছিলেন ফ্লাইং অফিসার তামান্না। ইতিহাস গড়া অপর নারী পাইলট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক।
গত ১৭ ডিসেম্বর যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান সলো টেস্টের সফলতার মাধ্যমে দুই নারী কর্মকর্তা সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি পান।
সলো টেস্ট সমাপ্তির পর পরই সামরিক দুই নারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করেছিলেন নিজেদের স্বপ্নের কথা।
সেদিন তামান্না বলেছিলেন, আমার ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিলো আমি দেশ রক্ষা ও মানুষের সেবায় দু:সাহসিক ভূমিকা রাখব। আজ আমার এ স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তামান্না আনন্দচিত্তে সেদিন আরও বলেছিলেন, আমি আজ খুব আনন্দিত যে সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করতে পেরেছি। আমি নারী সমাজের একজন গর্বিত সদস্য।
তামান্না রহমান ১৯৯৩ সালের ৫ জুন যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লুৎফর রহমান বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার মাতা আয়েশা সিদ্দিকী একজন গৃহিনী।
বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তামান্না। পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (অ্যারো) থেকে ফার্স্ট ক্লাস পান। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করেন তিনি।
বিমান বাহিনীর বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা ল্যান্ডিং ও উড্ডয়নসহ প্রশিক্ষণ প্রাথমিক ধাপে সফলভাবে সম্পন্ন করেন তামান্না রহমান।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে প্রথম বিমান বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে এ সকল নারী কর্মকর্তা বিমান বাহিনী ছাড়াও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান বিমান বাহিনীর প্রধান গত বছর সামরিক পাইলট হিসেবে নারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
প্রথম ধাপে নারী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চারজনকে বাছাই করে সামরিক পাইলটের মত চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নির্বাচিত করা হয়। এদের মধ্যে সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তামান্না।