উইমেন চ্যাপ্টার: নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন এর ‘ভোগ অ্যাম্পাওয়ার’ শীর্ষক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘মাই চয়েস’ নামে যে স্বল্পদৈর্ঘ্য একটি চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ‘ককটেল’খ্যাত বলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা হোমি আদজানিয়া। ভিডিওটির শুরুর লাইনে দীপিকার কণ্ঠে শোনা যায়, ‘মাই বডি, মাই মাইন্ড, মাই চয়েস’। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে ‘মাই চয়েস’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে।
‘মাই চয়েস’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ব্যাপ্তি আড়াই মিনিটের মতো। এতে দীপিকাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মোট ৯৯ জন নারী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাঁরা নিজেরাই নেবেন। সেইসাথে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেন তারা নিজেরাই নিজেদের পছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সেকথাও তুলে ধরেছেন অল্প সময়ের এই ভিডিওটিতেই।
‘মাই চয়েস’ প্রযোজনা করেছেন ‘ফাইন্ডিং ফ্যানি’খ্যাত বলিউডের চলচ্চিত্র প্রযোজক দীনেশ বিজন। সংলাপ লিখেছেন ‘ফাইন্ডিং ফ্যানি’ ছবির চিত্রনাট্যকার কার্সি খামবাত্তা। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিতে দীপিকার পাশাপাশি আরও যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন বলিউডের অভিনেতা-নির্মাতা ফারহান আখতারের স্ত্রী হেয়ার স্টাইলিস্ট অধুনা আখতার, ফারহানের বোন চলচ্চিত্র নির্মাতা জয়া আখতার, নির্মাতা হোমি আদজানিয়ার স্ত্রী ভোগ ইন্ডিয়ার ফ্যাশন ডিরেক্টর অনিতা শ্রফ প্রমুখ।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ‘মাই চয়েস’ নামের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। এতে সংলাপ আওড়েছেন দীপিকা। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নারীর পোশাক, পেশা কিংবা জীবন নিয়ে পুরুষের খবরদারি বন্ধের কথাও বলেছেন তিনি। সমালোচকেরা বলেছেন, শুধুমাত্র চুল ওড়িয়ে আর ব্রা এর স্ট্রিপ দেখিয়েই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না।
‘মাই চয়েস’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে দীপিকার কণ্ঠে শোনা যায়, ‘আমি যেভাবে চাই সেভাবেই জীবন-যাপন করার সিদ্ধান্ত নেব। আমি তেমন পোশাকই পরব যা আমার পছন্দ। বিয়ে করা কিংবা না করার সিদ্ধান্ত নেব আমি নিজেই। আমিই সিদ্ধান্ত নেব, আমি কোনো পুরুষকে, নারীকে নাকি উভয়কে ভালোবাসব। আমিই সিদ্ধান্ত নেব, কাউকে অল্প সময়ের জন্য ভালোবাসব, নাকি সারাজীবনের জন্য। আমি সন্তান নেব কি না, তার সিদ্ধান্তও হবে আমার। ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক শোরগোল উঠে। মানুষ দুই ভাগ হয়ে যায় এর অন্তর্নিহিত বার্তাটিতে। কেউ কেউ সাধুবাদ জানান দীপিকা এবং পরিচালককে।
সমালোচকদের মতে, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়টি আরও গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আদায় করলেই হবে না, সেইসাথে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মন-মানসিকতাকেও তৈরি করতে হবে প্রতিটি নারীকে। হালের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন সম্পর্কে তাদের মন্তব্য হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের বিষন্নতার কথা তুলে ধরে দীপিকা অসামান্য এক কাজ করেছেন। সেইজন্য তাকে সাধুবাদ। কিন্তু খোলামেলা পোশাকই যে ক্ষমতায়নের বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূলকাঠি নয়, সেটাও অনুধাবন করা প্রয়োজন।
সমালোচকদের আরও একটি পয়েন্ট হলো চলচ্চিত্রটির নির্মাণশৈলী নিয়ে। তবে পরিচালক সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এটা গণতন্ত্র। ভিডিওতে যা তুলে ধরা হয়েছে, সেটা আমাদের বক্তব্য। যারা এর সমালোচনা করছেন, তা তাদের বক্তব্য। মতভিন্নতা থাকতেই পারে গণতান্ত্রিক সমাজে।