উইমেন চ্যাপ্টার: জার্মানি থেকে এর শুরু, তারপর লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে এই অভিনব প্রতিবাদ এখন খোদ ভারতেই ছড়িয়ে পড়ছে। নারীদের স্যানিটারি প্যাডকে ব্যবহার করে অভিনব এই প্রতিবাদ এখন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে।
বিবিসি বাংলার এক খবরে একথা জানিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিবাদকারীরা এই পদ্ধতিকে একটা শক থেরাপি বলে বর্ণনা করেছেন।
সপ্তাহ তিনেক আগে ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘প্যাডস অ্যাগেইনস্ট সেক্সিজম’ নামে একটি ক্যাম্পেইনের সূচনা করেন ইলোনে কাস্ট্রাশিয়া নামে একজন জার্মান। স্যানিটারি প্যাডে নারী অধিকার ইস্যুতে বিভিন্ন বার্তা লিখে শহরের দেয়ালে, খাম্বায় সেঁটে দেয়ার এক অভিনব কর্মসূচি পালন করছেন জার্মানির ইলোনে।
জানা যায়, প্রথমে তিনি তার প্রজেক্ট আইডিয়া শেয়ার করেছিলেন Tumblr এ। মাত্র দুদিনেই তার আইডিয়া এক লাখেরও বেশি শেয়ার হয়ে যায়। যেসব বার্তা তিনি লিখছেন প্যাডে, সেগুলোর মূল বিষয়ই হচ্ছে নারী অধিকার, যৌন হয়রানি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর স্লোগান সম্বলিত। ইলোনের যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে, সেটি তিনি এক ব্যক্তির টুইট থেকে উৎসাহিত হয়েই করেছিলেন।
সেটি ছিল, imagine if men were as disgusted with rape as they are with periods…..
মূহূর্তে ইলোনের এই প্রজেক্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। ব্রাজিল, সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি বার্তা পেতে শুরু করেন। তারাও তাদের নিজস্ব ভার্সন শুরু করতে চান, এমন কথাই জানান ইলোনেকে।
এই ক্যাম্পেইনের মূল কথা ছিল পুরুষ যেমন রজ:স্রাবের রক্তকে ঘৃণা করে – ঠিক তেমনই ধর্ষণকেও যেন তারা ঘৃণা করে।
তবে দিল্লির অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া মিলিয়ার ক্যাম্পাসে স্যানিটারি প্যাড সেঁটে কর্তৃপক্ষর শো-কজের মুখে পড়তে হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে।
জামিয়া-র ইসলামী চর্চাকেন্দ্রের প্রধান আখতারুল ওয়াসি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘এমন একটা সংবেদনশীল প্রশ্নে এত কুৎসিত উপায়ে কেউ নিজের মনোভাব প্রকাশ করবে ভাবাই যায় না।’
তিনি বলছিলেন, নারীদের সম্মান দেখাতে হলে তাদের অনুভূতির প্রতি আমাদের মর্যাদা দিতে হবে, কিন্তু তার বদলে এটা তো তাদের প্রতি চরম অবমাননা! জেন্ডার সেন্সিটাইজেশন তৈরি করার সঠিক রাস্তা এটা নয় – আর আইনে বাধা নেই বলেই এভাবে প্রতিবাদ করা যাবে, সেটাও ঠিক নয়।’
জামিয়ার ওই ঘটনার মধ্যেই গতকাল শনিবার কলকাতার যাদবপুর ক্যাম্পাসেও দেখা গেছে স্যানিটারি প্যাডে আঁকা পোস্টার। তার কোনওটায় লেখা, ‘ধর্ষিতাকে দোষ-দেওয়াটাও কিন্তু লিঙ্গ-সহিংসতা’। কোনওটায় আবার লেখা হয়েছে, ‘ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করে তাকে লজ্জায় ফেলাটা যৌন সহিংসতা’।
যে ছাত্রছাত্রীরা এই সব পোস্টার সেঁটেছেন বা সেটাকে সমর্থন করছেন তারা প্রায় কেউই নাম প্রকাশ করতে চান না – তবে তাদের প্রতিবাদের এই পদ্ধতি ক্যাম্পাসকেও কিন্তু কার্যত দুভাগ করে দিয়েছে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগের অধ্যাপিকা সুচরিতা চ্যাটার্জি বলছিলেন, এই ধরনের প্রতিবাদ কিন্তু অনেককে অস্বস্তিতেও ফেলতে পারে। তাঁর বক্তব্য হল, ‘প্রতিবাদের পদ্ধতি কাউকে আহত করছে কি না বা অস্বস্তিতে ফেলছে কি না সেটাও দেখা দরকার।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই সহকর্মী ও ইতিহাসের অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্যর আবার এটাকে ন্যায্য প্রতিবাদের পথ হিসেবে মানতে আপত্তি নেই।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘সব প্রতিবাদের পদ্ধতি সবার মনোমত হতে নাও পারে, কিন্তু মানুষের ভাবনাকে একটা ধাক্কা দিতে বা নাড়া দিতে এধরনের পদ্ধতি কিন্তু প্রয়োগ করা হতেই পারে। আর ছাত্ররাই তো তাদের প্রতিবাদে উদ্ভাবনী শক্তি দেখাবে, তাই না?’
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের জেরে খবরের শিরোনামে থাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এই স্যানিটারি প্যাড পোস্টারিংয়ের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে খবর নেই।
কিন্তু ষাটের দশকে আমেরিকায় নারীবাদীদের ব্রা পোড়ানোর আন্দোলনের মতোই ভারতের নানা ক্যাম্পাসে যে স্যানিটারি প্যাড প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে সাড়া ফেলছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই!
সূত্র: বিবিসি বাংলা