তাসলিমা মিজি: আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে, অভিজিৎ রায়কে খোকা, মান্না, আনসারুল্লাহ, মৌলবাদী গোষ্ঠী, আমেরিকা, রাশিয়া, গোপন শত্রু, প্রকাশ্য শত্রু, গভীর শত্রু সবাই মিলে যৌথভাবে কুপিয়েছে। আর তাতে শান্তিকামী নাগরিকরা স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী অপশক্তির ভয়ে তটস্থ হলেও কোন হিসেব কষতে বসছে না, এই খুনের প্রতিক্রিয়ায় কাদের লাভ হয়েছে!
জাতির পিতার কন্যার কাছে আবেদন জানাই, দয়া করে বলে বসবেন না “নো ওয়ান কিলড্ অভিজিৎ”।
অতীতে ঘটে যাওয়া এ জাতীয় খুনগুলোর সাথে আক্রমণের টেকনিকের মিল থাকলেও অভিজিতকে কুপিয়ে খুনীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত রেখে গেছে। ঘটনার মিনিট বিশেক পর বইমেলা থেকে ফেরার পথে রক্তাক্ত ফুটপাথে দুটো মোটর বাইক পড়ে থাকতে দেখেছি। আর মিডিয়ায় বলা হয়েছে ওরা নাকি ছুরি ফেলে গেছে।
“আনসার বাংলা ৭” টুইট করে সদর্পে খুনের দায় নিয়েছে। আর ফেসবুক জুড়ে কিলবিল করছে অতীব ঘৃণিত সব হিংস্র কমেন্ট। একটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনায় নিশ্চয়ই খুনীদের মাঝে ফোনালাপ হয়েছে। তদন্তে ফোনালাপ চেক করাটা কাজে আসতে পারে। আর তার জীবনসঙ্গী রাফিদা আহমেদ বন্যা একজন চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন।
বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে কি না করেছে!!! শক্তিশালী ফিশিং সফটওয়্যার দিয়ে অনায়াসে কত কি বের করে ফেলছে। আর এইসব অসভ্য দু’পেয়ে প্রাণীগুলো যে অভিজিতের উপর ঘৃণ্যতম হামলায় ফেসবুকে ন্যাংটা নৃত্য করছে, ডিজিটাল সরকার কি পারে না ক’টাকে ধরে জেলে পুরতে?
হায় অভিজিৎ রায়! এই স্রোতে গা ভাসানোর যুগে একজন অভিজিৎ রায় কত যে বিরল! দেশের জ্ঞান বিজ্ঞান গবেষণা, চিন্তার মুক্ত প্রবাহ, কুপমন্ডুকতা ভেঙ্গে মানবতার জয়গান গাওয়ার কি প্রাণান্তকর লড়াই চালিয়ে গেছেন এই বাংলা তরুণ । ঘটনায় আরো গুরুতর আহত অভিজিৎ রায়ের জীবন সঙ্গী ও সহযোদ্ধা লেখক রাফিদা আহমেদ বন্যা বাকী জীবন বেঁচে থাকবেন এক দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে।
অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু যেন মুক্তপ্রাণের মৃত্যু না হয়, এ দায়িত্ব আমাদের সকলের। আর সরকারকে বের করতেই হবে কাদের এত বড় আস্পর্ধা, ওদের বিষদাঁত ভেঙ্গে প্রমাণ করতেই হবে, এদেশ হায়েনাদের নয়। এদেশ সকল মানুষের, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল ভাষাভাষীর, জাতির আর সকল মতের।
(ফেসবুক থেকে নেয়া)