
মনোরমা বিশ্বাস: কিছুদিন আগে গ্রিস এবং স্পেনের জাতীয় নির্বাচনে বামপন্থীদের অভাবিত সাফল্যের কারণ সম্পর্কে পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মেয়েদের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বামপন্থীদের তরফে সবচে জোরালোভাবে দেয়া হয়েছিল বলেই নির্বাচকমণ্ডলীর সরব সমর্থন পায় বামপন্থীরা।
বিশ্বায়নের এ কালে গণতান্ত্রিক রাজনীতির একচেটিয়া আধিপত্যের এ সময়ে নারী সমাজের ভোটে বামপন্থীদের এ পুনরুত্থান তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর দেশে দেশে নারী সমাজকে অবহেলা করে প্রগতি যে আদৌ সম্ভব নয়, অগ্রসর ইউরোপীয় সমাজ যেন এ বার্তাটিই বিশ্ববাসীকে নতুন করে জানিয়ে দিল।
আমারও কৌতূহল জাগলো, বিশ্বে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই, কী হাল এর? কতটুকু এগিয়েছে মেয়েরা? আমরা জানি এই পৃথিবীর ২/৩ ভাগ কাজ করে মেয়েরা, অথচ তাদের অর্থনৈতিক অর্জন পৃথিবীর মোট আয়ের মাত্র দশ ভাগ।
তাহলে কিভাবে এগোবে সমাজ? উন্নয়ন গবেষকরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, টেকসই উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক কাঠামোয় মেয়েদের অধিকতর অংশগ্রহণ কতটা অপরিহার্য।
তাই উন্নয়ন কৌশল প্রণেতাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে রাজনীতিসহ সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হবে। নেতৃত্বের সমতা জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক উৎসের সুষ্ঠু বণ্টন এনে দেবে। আর এর ফলে মেয়েরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
যেমন, পানি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি সমানভাবে পাবে। জাতিসংঘে ‘লৈঙ্গিক সমতা’ নিয়ে প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। কিছু সক্রিয় উদ্যোগও নেয়া হয়েছে তদুপরি উন্নতি খুব কমই হয়েছে। স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেয়েরা এখনও পিছিয়ে আছে।
পদ্ধতিগত দিক দিয়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও মেয়েরা পিছিয়ে। ফলে প্রকৃত ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে মেয়েরা ভূমিকা রাখতে পারছে না এবং পুরুষদের তুলনায় জীবন যাত্রার মানও আশানুরুপ হতে পারছে না। রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণের অপরিহার্যতা স্বীকার না করলে উন্নয়নের অর্থনীতি যে কার্যকর কোন সুফল বয়ে আনবেনা এটা এখন বিশ্বজনীন বাস্তবতা। বাংলাদেশকে যে বাস্তব অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তা একটু জটিল।
এখানে মধ্যপ্রাচ্যের মত মেয়েদের সরাসরি শেকল পরানোর সুক্ষ্ম উদ্যোগ যেমন আছে, পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে মেয়ে শ্রমিকদের বিপুলভাবে কর্মরত থেকে অর্থনীতির চাকাকে সক্রিয় রাখার মত বিশাল অবদানও আছে। তবে এদেশে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার সাংস্কৃতিক আধিপত্য মেয়েদের স্বার্থের বিপরীতে বড় অন্তরায় হয়ে আছে আজো। এ পশ্চাদপদ চিন্তা নারীকে ব্যক্তিগতভাবে পুরুষের অধীনে করে রেখেছে।
নারীকে জনসম্মুখে আসতে বাধা দিয়েছে এই পুরুষতান্ত্রিক কালচার। জনসাধারণ থেকে নারীকে পৃথক করে রাখা হয়েছে। যদিও দেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তথাপি এটি ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ বিশেষত মেয়েরা আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভয়ানকভাবে পিছিয়ে।
সংক্ষিপ্ত যে ধারণা দেয়া হলো তাতে আমার মনে হয়েছে মেয়েদের সমস্যা উত্তরণে এ মূহূর্তে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে বৃহত্তর পরিসরে মেয়েদের ইতিপূর্বে প্রাপ্ত অধিকারসমূহের সুরক্ষায় এবং নতুন দাবি-দাওয়া আদায়ে মেয়েদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য আমরা কি করতে পারি-
তার একটা ছোট তালিকা এখানে সবিনয়ে উল্লেখ করছি —
- নিজেদের শিক্ষিত করতে হবে।
- যেসব সংস্থা মেয়েদের অধিকার নিয়ে বলে তাদের সহায়তা করতে হবে।
- সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে।
- এটা নিয়ে লিখতে হবে।
- অনলাইন পত্রিকা এবং বিভিন্ন ব্লগে ক্রমাগত লিখে যেতে হবে, কথা বলতে হবে।
- এটা নিয়ে ভাবতে হবে, অন্যদের সাথে সে ভাবনা বিনিময় করতে হবে।