পৃথিবী জয় করা চার এশিয়ান নারী নির্মাতার গল্প

উইমেন চ্যাপ্টার: আবারও প্রসঙ্গ নারী। নারীর সাফল্যগাথা বলে শেষ হয় না। সৃজনশীলতায়, উৎকর্ষতায়, সৌকর্যে, সবখানেই নারী। যার উদ্যম আছে, কিছু করার মানসিকতা আছে, শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেই। পৃথিবীর নানান পেশায় তাই বীরদর্পে বিচরণ করছে নারী। নারী আজ আকাশে উড়ছে, যুদ্ধ করছে, জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে গহীন সমুদ্রে। পেশাদারিত্বের সব জায়গাতেই নিজেদের উজ্জল উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়া এমন চার এশীয় নারী নির্মাতার কথা তুলে ধরা হলো এখানে। লেখাটি সংগৃহীত।

মীরা নায়ার

Mira Nayar
মীরা নায়ার

১৯৫৭ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের উড়িষ্যায় জন্ম নেয়া এই নারী নির্মাতা নিজের প্রথম ফিচার ফিল্ম দিয়েই বাজিমাৎ করে ফেলেন। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘সালাম বোম্বে’। প্রথম সিনেমা মুক্তির পরই দুনিয়া ব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সালাম বোম্বে কান ফ্যাস্টিভালে গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার জেতে। এছাড়াও অস্কারে বিদেশি ভাষার শ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে মনোনিত হয় এটি। মীরা নায়ার একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক। তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো নেমসেক, ভ্যানিটি ফেয়ার, দ্য প্যারেজ ফ্যামিলি ও অ্যামেলিয়া।

সামিরা মাখমালবাফ

Samira Makhmalbaf
সামিরা মাখমালবাফ

সমকালীন নারী নির্মাতাদের মধ্যেই শুধু নয়, বরং সামগ্রিক বিবেচনায় সামিরা মাখমালবাফ জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বচলচ্চিত্রকারদের তালিকায়। একজন প্রভাবশালী সিনেমা নির্মাতা হিসেবে তিনি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ইরানের তেহরানে তাঁর জন্ম। বাবা আরেকজন স্বনামধন্য সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা মহসিন মাখমালবাফ। সিনেমার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় সামিরার উচ্চবিদ্যালয়ের গণ্ডিও পার হয়নি। পাঁচ বছর মেয়াদি সিনেমা নির্মাণের কোর্স করতে গিয়ে একাডেমিক পড়াশুনা ছেড়েছেন এই গুণী নির্মাতা। মাত্র দুটি ভিডিও প্রোডাকশন নির্মাণের পর মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি বিশ্বচলচ্চিত্রের অঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দেন ‘আপেল’ সিনেমাটি নির্মাণ করে। এই সিনেমার পর বিশ্বের নানা প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতিও পুরষ্কার যোগ হয় তাঁর ক্যারিয়ারে। আপেলের পর তিনি ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নামের অন্য একটি সিনেমা নির্মাণ করেও পৃথিবীর সিনেমা জগৎকে যেনো একটা ঝাঁকি দেন। সেপ্টেম্বর ১১, এট ফাইভ ইন দ্য আফটারনুন এবং টু লেগড্ হর্স নামের সিনেমাগুলোও সমানভাবে সিনেমা ক্রিটিকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

হায়ফা আল মনসুর

Haifa Al Mansur
হায়ফা আল মনসুর

কবি আব্দুর রহমান মনসুরের বারো সন্তানের আটতম হায়ফার জন্ম ১০ আগস্ট ১৯৭৪। বাবার আগ্রহেই হায়ফা সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হোন।

সৌদি আরবের মতো একটা কট্টর মুসলিমপ্রধান দেশের প্রথম নারী সিনেমা নির্মাতার নাম হায়ফা আল মনসুর। শুধু কি নারী নির্মাতা হিসেবেই প্রথম? না, বরং সৌদি আরবের সিনেমা নির্মাণের ইতিহাসে হায়ফার নাম সর্বাগ্রে। কারণ তিনিই যে সৌদি আরবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, অ্যাকশন আর কাট! তাই হায়ফা শুধু একজন সিনেমা নির্মাতাই নন; বরং আধুনিক সিনেমাওয়ালাদের কাছে তিনি একজন জলজ্যান্ত ইতিহাসও বটে। সৌদি আরবে একজন নারীর সিনেমা তৈরির পেশন খুব একটা সহজতো নয়ই, বরং কঠিনতর চ্যালেঞ্জের বিষয়। অথচ হায়ফা সেই কাজটিই করে দেখালেন, কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কাজের জন্য সৌদি ফিরে আসেন। এবং সৌদিতে এসে দেখলেন নারীদের হিডেন লাইফ,পুরুষশ্রেণীর চাপিয়ে দেয়া বাধ্যবাধকতা; যা তাকে ভীষণ পীড়া দেয়। ফলে সৌদিতে নারীদের এমন জীবনাচরণের উপর ভীত্তি করেই তিনি নির্মাণ করতে উদ্বুদ্ধ হোন ‘ওয়াদজা’। পুরো সিনেমাটা খুব কৌশলে শ্যুট করেন সৌদির রাস্তায়। কারণ সৌদিতে সিনেমা শ্যুট করা নিষিদ্ধ। এমনকি ওয়াদজা সিনেমার শ্যুটিং যেখানে হয়েছে, সেখানটায় এখনো নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিত আছে।

ওয়াদজা মুক্তির পরই সমস্ত দুনিয়া সচকিত হয়ে উঠে হায়ফার এমন দু:সাহসী কাজে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতে প্রদর্শিত হতে থাকে ছবিটি। আসতে থাকে অ্যাওয়ার্ড। ৮৬তম অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র কোটায় পুরষ্কার জেতেন হায়ফার ওয়াদজা। এবং প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেই অস্কারপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সৌদি আরবের নাম।

দীপা মেহতা

Dipa Mehta
দীপা মেহতা

দীপা মেহতা ভারতীয় বংশজাত একজন কানাডিয়ান নাগরিক। তিনি ইন্দো-কানাডিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত নির্মাতা হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হলেও তিনি তার ‘ট্রিলোজি’ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত। তার ‘ইলিমেন্টস ত্রয়ী’ হচ্ছে ফায়ার-(১৯৯৬), আর্থ (১৯৯৮), ওয়াটার(২০০৫)। দীপা মেহতা তার ছবিতে নারী হৃদয়ের ক্ষতকে যেনো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। বিধবা নারীর সহমরণ, বাল্যবিবাহের প্রকোপ নিয়ে তিনি সফল কিছু কাজ করেছেন চলচ্চিত্রের ভেতর দিয়ে। ফায়ার সিনেমায় সমকামিতা দেখানোর জন্য হয়েছেন ব্যাপকভাবে সমালোচিত। তার মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ সিনেমার নাম ‘মিডনাইট চিলড্রেন’; যা বিখ্যাত লেখক সালমান রুশদির উপন্যাসের সফল চিত্রায়ন। এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা ‘বিবা বয়েস’। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত হয়েছেন।

(লেখাটি প্রিয় ডট কম থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.