লীনা পারভীন: দেশের চলমান অরাজকতা, দেশবিরোধী কিছু লোকের দেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, রাজনীতিবিদদের চরম দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমরা বাংলাদেশিরা যখন নিজেদেরকে বড্ড হতভাগা ভাবতে শুরু করেছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আজ আমরা আবার ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, না, আমরা হতভাগা জাতি নই। ৭১ এ আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কোন ভুল করেনি। তারা ভুল লোকদের হাতে দেশকে ছেড়ে দেয়নি। আমরা পারি দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনতে। নিজের প্রাপ্য বুঝে নিতে।
দেশপ্রেম যার ভিতর আছে সে কখনই দেশের মাথা নিচু হবে এমন কাজ করতে পারে না। আবার তা প্রমাণিত। আর বাংলাদেশের জন্য এই মূহূর্তে যেটা সবার আগে দরকার তা হচ্ছে দেশপ্রেম। আমাদের সবার ভিতর যদি দেশপ্রেম একই রেখায় অবস্থান করতো তাহলে আজকের এই হানাহানি, কাটাকাটি দেখতে হতো না।
আমাদের জাতীয় দলগুলোর ভিতরে বিশেষ করে এবারের ক্রিকেট দলের মধ্যে আমি যেন সেই দেশপ্রেমের পরিষ্কার অবস্থান দেখতে পেলাম আরেকবার। আজকের এই বিশ্বসেরা জয়কে মাশরাফি উৎসর্গ করেছেন আমাদের দেশের সেইসব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যারা শিখিয়ে গেছেন দেশ কাকে বলে, দেশের প্রতি ভালোবাসা কাকে বলে, দেশকে কিভাবে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের মাথা কিভাবে উঁচু রাখতে হয়, আর সবচেয়ে বড় কথা কিভাবে নিজের অংশ অন্যের দখল থেকে আদায় করে নিতে হয়।
মুক্তিযোদ্ধা একটি পবিত্র শব্দ, কিছু হার না মানা মানুষের ছবি। তাদের সেই রক্ত বইছে আমাদের দেশপ্রেমিক ক্রিকেটারদের মধ্যে, তারা কি মাথা নিচু করে হারতে পারে? না পারে না। যতবার আমরা বাংলাদেশিরা হতাশার মধ্যে ডুবতে থাকি, টানেলের শেষ প্রান্তের সে আলোটুকু আর খুঁজে পাই না, ততবার আমাদের ক্রিকেট বীররা আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছে পরিবর্তনের হাওয়া।
আজ তারা আবার প্রমাণ করলো, একমাত্র ক্রিকেটই পারে আমাদের জাতীয় বিভক্তিকে দূর করতে, সর্বনাশের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে। আজ অত্যন্ত আনন্দ হচ্ছে একটি খবর দেখে যে, বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোট তাদের হরতাল শিথিল করেছে, হয়তো এই একটা সুযোগে তারা একেবারে বন্ধ ঘোষণা করতে পারতেন এবং সেটাই হতো তাদের সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমের উদাহরণ। তবে বরফ তো গলতে শুরু করেছে, ধর্ম যা করতে পারেনি, ক্রিকেট তা করে দেখিয়েছে।
হয়তো দেখা যাবে বাংলাদেশের পরবর্তী জয়ের ফলে তারা তাদের ধংসাত্মক কর্মসূচী থেকে সরে আসবে এবং দেশপ্রেমের রাজনীতি করবে আবার।
অনেক ভারী কথা হয়ে গেলো। আজকের এই আনন্দের দিনে মনে অনেক কথাই আসছে আর এতে কোন বাধ দেয়া যাচ্ছেনা।
যাই হোক বাংলাদেশের জয়ে অনেকেরই প্রশংসা শুনেছি, তবে গায়ে পেট্রোল বোমাটা পড়েছে পাকিস্তানী রমিজ রাজার। কোনভাবেই সে বাংলাদেশের প্রশংসা দূরে থাকুক, বার বারই চেষ্টা করেছে এটিকে একটি আপসেট হিসাবে প্রমাণ করতে। বোঝাতে চেয়েছে, বাংলাদেশের এই জয় প্রাপ্য ছিল না। আন্ডারডগ শব্দটি তো সে বলেই ফেললো।
রমিজ রাজাকে বলি, ৭১ সালের ইতিহাস আবার পড়ে দেখো, বুঝে নাও বাঘের গর্জন কাকে বলে। বাঘের পেটে ক্ষুধা থাকলে সে কিভাবে তার আহার জোগাড় করে নেয়। বার বার শিক্ষা পেয়েও, শিক্ষা হয় না তোমাদের।
একই দম্ভে ফেটে যাচ্ছে আমাদের বন্ধুপ্রতিম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট দল। তারা তো রীতিমত বলা শুরু করেছে ইন্ডিয়া সেমিতে চলে গেছে।
বাহ!!!! বাংলাদেশকে তোমরা কাউন্ট করছো না? দাঁড়াও, বেশি বাড় বেড়োনা। বলা যায় না, ইন্ডিয়ানদের এই অতিরিক্ত দম্ভ, ওভার কনফিডেন্সই হয়তো ডেকে নিয়ে আসতে পারে ওদের সর্বনাশ!!!
আজ ভাষ্যকাররা বার বার বলছিলেন, টাইগাররা লায়নকে আউট করে দিলো। কী যে ভালো লাগছিলো ওদের মুখে এই টাইগার্স শুনতে। আহহহহহহহ টাইগার্স শব্দের মধ্যে আগে ভয় লুকিয়ে ছিলো, এই বুঝি হালুম বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে, কিন্তু এখন টাইগার্স শুনলে আপন আপন লাগে, আদর আদর লাগে।
লাভ ইউ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, লাভ ইউ টাইগার্স, লাভ ইউ মাশরাফি, মুশি, সাকিব আর রুবেলের জন্য আমরা সবাই আজ দারুণ খুশি। তোমরা সবাই এক-একজন দেশপ্রেমিক, দেশের রক্ষাকর্তা, অমিলের মধ্যে মিলনের সুবাতাস।
পাদটীকা: এই কটি লাইন লেখার সময় খবর পেলাম, বিএনপি কোথায় যেন আনন্দ মিছিল থেকে গাড়ি ভাংচুর করেছে, আর পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়েছে। জানি না, কাল হরতাল শিথিল করে আনন্দ মিছিল বের করবে বিএনপি ঢাকায়। আদতে সেখানে কি হয়, কে জানে!