বন্যা, আর ফিরে এসো না এই পোড়ার দেশে

Bonnaসুমন্দভাষিণী: শেষপর্যন্ত মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে আর একটি আঙুল দেশকেে উপহার দিয়ে পোড়া মন নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন রাফিদা আহমেদ বন্যা। যিনি ফেসবুকে বন্যা আহমেদ নামেই পরিচিত। তিনি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বুয়েটের সাবেক শিক্ষক, মুক্তচিন্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও গবেষক ডঃ অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী। বন্যা নিজেও লেখক এবং ব্লগার। এবং তিনি নিজেও সেদিন অভিজিৎকে বাঁচাতে গিয়ে মাথায় কোপ খেয়েছেন, খসে গেছে তাঁর একটি আঙুল।

চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে, একথা নিশ্চিত করেছেন তার শ্বশুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. অজয় রায়। তিনি বলেছেন, মার্কিন দূতাবাসের ব্যবস্থাপনাতেই বন্যাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তিনি এরইমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। অভিজিৎ রায় অনেক বছর ধরেই সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।

২৬ তারিখ রাত থেকেই বন্যাকে চিকিৎসাধীন রাখা হলেও ড. অভিজিতের মৃত্যুর খবর তাকে জানানো হয়েছে আরও পরে। একবার সংসার ভেঙে যাওয়ায় দ্বিতীয়বার তিনি অভিজিতের সাথে সংসার গড়েছিলেন। যে লেখালেখি তাদের ভিতরে সখ্য গড়ে তুলেছিল, যূথবদ্ধ সংসার গড়তে সহায়তা করেছিল, সেই লেখালেখিই তাদের মাঝে আজ বিস্তর ব্যবধান গড়ে দিল। ইচ্ছে করলেই আর দুজনে বিজ্ঞান বা ধর্ম বিষয়ে তর্কে জড়াতে পারবেন না, ইচ্ছে করলেই বেরিয়ে পড়তে পারবেন না বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। পারবেন না আর কোনদিন একুশে বইমেলায় হাত ধরাধরি করে কিশোর-কিশোরীর মতোন হাঁটতে। জীবনের মতোন সব স্তব্ধ হয়ে গেল বন্যার। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ তো নেই আজ, আছে শুধু বন্যা আর তার স্মৃতি। এই স্মৃতিতাড়িত হয়ে কতদিন বন্যা তার লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে।

আজ বন্যার উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলবো, বন্যা, এখনকার দুর্বিষহ সময়টা পার হয়ে গিয়ে যখন একটি নতুন সূর্য আসবে, তখন আবার আপনি কলম হাতে নেবেন, ছিড়েঁখুঁড়ে বের করে আনবেন অভিজিতের রেখে যাওয়া স্বপ্নগুলো। যদি পারেন, এই মরার-পোড়ার দেশে আর আসবেন না আপনি, মেয়েটিকেও আসতে দেবেন না। মেয়ে তৃষার লেখা এরই মধ্যে পড়েছি আমরা। বায়োলজিক্যাল বাবা না হয়েও অভিজিৎ যেভাবে তার বাবা এবং বন্ধু হয়ে উঠেছিল, একথা তার লেখাতেই আমরা পেয়েছি। মেয়েটিকে এ থেকে বিচ্যুত করবেন না। আদর্শ কেবল রক্তজাতেরাই পায় না, রক্তজাত না হয়েও আদর্শ-চেতনা ধারণ করতে পারে। আপনি সেটা করবেন আশা করি।

বন্যা, ফিরে যাচ্ছেন নিজ জায়গায়, সুস্থ হয়ে উঠুন মনে-প্রাণে এটাই চাই। এই কদিন ধরে অভিজিতের জন্য শোক প্রকাশ করা ছাড়াও আপনার আরোগ্য চেয়েছি প্রতিটি মূহূর্তে। বিশ্বাস করুন। আইসিইউতে ছিলেন বলে যাইনি। কী হবেই বা গিয়ে!

আদিউস বন্যা!!!!

শেয়ার করুন: