নাজিয়া হক অনি: একটা মেয়েকে বলা হয়, মেয়ে হয়ে জন্মেছ যখন বিয়ে করতেই হবে, একটা ছেলেকে কেন বলা হয় না তোমাকে বিয়ে করতেই হবে? একটা মেয়েকে বলা হয়, মেয়ে হয়ে জন্মেছ মা হতে না পারলে তোমার জীবন বৃথা। একটা ছেলেকে কেন বলা হয় না বাবা হতে না পারলে তোমার জীবন বৃথা? বিয়ে তো মেয়েদের একার হয় না, একটা ছেলেরও হয়। তাহলে কেন একটা মেয়েকেই শুধু বিয়ের জন্য পরিবার থেকে সমাজ থেকে চাপ দিয়ে তার শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার অবস্থা হয়? কেন একই বয়সের একটা ছেলেকে বিয়ে না করে আরও পড়াশোনা করার জন্য, আরও বড় হবার জন্য তাগিদ দেয়া হয় আর মেয়ের জন্য ঠিক উল্টো ব্যবহার করা হয়?
মেয়েরা নাকি মায়ের জাত!! ছেলেদের বাবার জাত তো বলা হয় না। কেন বলা হয় না? বাবার দরকার পরে না একটা বাচ্চা জন্ম নিতে? একটা বাচ্চা বড় করতে? তাহলে কেন এই সমাজে একটা মেয়েকে যেভাবে মা হও মা হও মা না হতে পারলে তোমার জন্ম বৃথা এই গান গেয়ে শোনানো হয় সেরকম একটা ছেলেকে কেন শোনানো হয় না বাবা হও বাবা হও বাবা না হতে পারলে তোমার জন্ম বৃথা? একটা মেয়ে হয় নিজের বাচ্চার মা হবে নাহলে জাতির মা হবে যেমন মাদার টেরেসা হয়েছিল। কিন্তু কারো মা না হয়ে শুধু মানুষ হয়ে বাঁচার কোন অধিকার তার নেই?
আর যদি কোন মেয়ে বলে সে মা হতে চায় না? তার বাচ্চা দেখলেই আদর করার জন্য কোন আহ্লাদী মনে আসে না, তার বাচ্চা লালন পালন করার মত দায়িত্ব নিতে সে ইচ্ছুক না, আগ্রহী না তবে তাকে ধরে নেয়া হয় সে অস্বাভাবিক। কিন্তু এই একই আচরণ একটা ছেলের কাছ থেকে আশা করা হয় না। আশা করা হয় না কোন ছেলে বাচ্চা দেখলেই আই কুতুকুতু বলে লাফিয়ে উঠবে বরং এমন আচরণ কে তার পৌরুষের অপমান বলে ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রে। তার কারন কি?? মেয়েরা যদি জন্ম দেয় বলে মা হয় বলে স্বভাবতই শিশুদের প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে তবে ছেলেদেরও তো থাকার কথা তাই না?
মাতৃত্বই যদি একটা মেয়ের পরিপূর্ণতা হয় তবে পিতৃত্ব কি একটা ছেলের পরিপূর্ণতা হওয়ার কথা বা? কিন্তু হয় না কেন?
অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম। এবার উত্তর দেই।
এই সমাজে এখনও মেয়েরা শুধুই মেয়ে র্য়ে গিয়েছে, মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। নিজের মন, নিজের দেহ, নিজের আত্মা তাদের নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই, নিজের অধিকারে নেই এবং সেই অধিকার অর্জন করতে যা করা দরকার তা অর্জন করার প্রচেষ্টাও নেই। যতই পড়াশোনা করুক, যতই উপার্জন করুক, যতই দেশের মানুষের কল্যাণ করুক, যতক্ষণ পর্যন্ত একটা মেয়ে নিজেকে সক্ষম স্বাধীন মানুষ হিসাবে ভাবতে, কল্পনা করতে, বিশ্বাস করতে না পারবে এবং না জানবে এটাই তার প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয়, ততক্ষণ পর্যন্ত রং মাখা আর স্ং সাজা অন্তঃসারশুন্য পুতুলের মত তাদেরও মূল্য নির্ধারণ করে কেনাবেচা করা হবে, তাই হচ্ছে, তাই হবে।
তুমি যে অমূল্য, তোমার মূল্য তোমাকেই আগে বুঝতে হবে। নাহলে অন্য কারো দায় পড়েনি তুমি নিজেকে সস্তা থেকে আরও সস্তা বানাবে আর অন্যরা তোমাকে উচ্চমূল্যে সম্মান করবে।