মনোরমা বিশ্বাস: ক্লিনিকে রোগী দেখার সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি আমি। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সবার সঙ্গেই কথা বলতে হয়। যেসব মেয়ের মেনোপোজ হয়েছে, তাদের সঙ্গে এর উপসর্গ নিয়ে কথা বলি। এ বিষয়ে বাস্তব যে জ্ঞান বা ধারণা রোগীদের কাছ থেকে পেয়েছি আর পড়াশোনা করে জেনেছি, তা কিঞ্চিৎ এখানে উল্লেখ করা হলো।
এক রোগী আসেন, তিনি সিঙ্গল, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মেনোপোজ-এর সময় তার কী-কী উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। তিনি জানালেন, তার ডিপ্রেশন দেখা দেয়, তার ওজন অনেক বেড়ে যায়। তিনি হাসপাতালে কাজ করেন, কাজের জায়গায় তার সমবয়সী আরো কিছু মহিলা আছেন, তারা তাকে অনেক সহযোগিতা করেন এই ডিপ্রেশনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য। তার পায়ে ব্যথা, তাই ঠিকমতো ব্যায়াম করতে পারেন না। আমি তাকে বললাম, ‘আপনি কি জানেন, এই সময় পুরুষ পার্টনারের সঙ্গে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়। মানসিক অনেক টানাপোড়েনে পড়তে হয়, পার্টনার যদি সেটা ঠিকমতো না বোঝে তা হলে অনেক বিপর্যয় ঘটে।আমার কথা শুনে হাসতে-হাসতে বললেন, ‘আমার এক বান্ধবী রাগ করে হাসবেন্ড এবং ছেলেমেয়ে ছেড়ে চলেই গেছে।
আমার আর এক রোগী জানিয়েছেন, মেনোপোজ-এর সময় তার মেজাজ খুব খারাপ থাকত, স্বামীকে রাগ করে বলত বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে। সব রাগ স্বামী বেচারার উপর ঝাড়ত।এই বিষয় নিয়ে আর একজন রোগীর সঙ্গে কথা বলি, আলাপকালে আমার সঙ্গে আমার এক অ্যাসিস্ট্যান্টও যোগ দেয়, যার নিজেরও মেনোপোজ হয়েছে। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা বেশ ওঠানামা করে, হঠাৎ করে গরম লাগে। মেয়েদের শরীরের একটা হরমোন কমে যেতে থাকে, তার কারণেই শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা, সেই সঙ্গে মেজাজও ওঠানামা করে। রোগীর সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারি, তাঁর এক বান্ধবীর মেনোপোজ এর সময় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মহিলার হয়তো হঠাৎ গরম লেগেছে, গাড়িতে বসে আছে, স্বামীকে বললেন এসি চালিয়ে দিতে, স্বামী কিছুতেই এসি চালাবেন না। কারণ স্বামী তো গরম বোধ করছেন না। এই রকম ছোটখাটো বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে খিটমিট লেগেই থাকত। স্বামী কিছুতেই বুঝতে পারতেন না স্ত্রী কেন এমন করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং মহিলা নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে যান। স্বামী ভদ্রলোক পরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, কিন্তু স্ত্রী অভিমান করে অনেক দূরে চলে যান যে ঠিকানা স্বামী আর খুঁজে পান না।
আমার এক নিকটতম বান্ধবী আছে, প্রায়ই কথা বলি তার সঙ্গে। সেদিন জানাল, তার অনেক কিছুই মনে থাকে না, ভুলে যায়। স্বামীর সঙ্গেও খিটমিট লেগে থাকে, অনেক কিছুই না কি সহ্য হয় না তার। আর এক পরিচিত মহিলা আমার বয়সী, জানিয়েছেন একদিন, তিনি না কি খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলেন, এখন ঝগড়াটে হয়ে গেছেন, স্বামী এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি, তাই স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আর এক মহিলা জানিয়েছেন, তার স্বামী এবং দুই ছেলে তার বিপক্ষে চলে গেছে। তিনি অনেক মানসিক সংকটে আছেন এখন, মাঝে-মধ্যে রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে যান। তিনি এখন স্বামী এবং ছেলেদের শত্রুই মনে করেন।কিছুদিন ধরে দেখছি, তিনি আর ফেসবুকে আসছেন না।
এখানে কিছু উপসর্গ দেয়া হলো:
- Hot flashes 02. Night sweats 03. Irregular periods 04. Loss of Libido 05. Vaginal Dryness 06. Mood swings
Changes:-
- Fatigue 08. Hair loss 09. Sleep disorder 10. Difficult concentrating 11. Memory lapses 12. Dizziness 13. Weight gain 14. Incontinence 15. Bloating
- Allergies 17. Brittle Nails 18. Changes in odor 19. Irregular heart beat 20. Depression 21. Anxiety 22. Irritability 23. Panic disorder
Pain:
- Breast pain 25. Headaches 26. Joint pain 27. Burning Tongue 28. Electric Shocks 29. Digestive problem 30. Gums problem 31. Muscle tension
- Itchy skin 33. Tingling Extremities
Others:
Osteoporosis.
মেয়েদের মধ্যে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তা হল, শরীরের ভেতর হঠাৎ গরম হয়ে ওঠা, রাতে ঘাম দেখা দেয়া এবং হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া। আরো আছে, যেমন মাসিকের গণ্ডগোল দেখা দেয়া, যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, মুড অর্থাৎ মেজাজ হঠাৎ ওঠানামা করা ইত্যাদী। রোগীর ঘুমের অনিয়ম হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়, অনেক কিছু ভুলে যায়, অনেকেই মোটা হয়ে যায়। প্রস্রাব চেপে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে; পেট, তলপেট ব্যথা করে। কারো-কারো নখ ভঙ্গুর হয়, চুল পড়ে যায়। মাজা ব্যথা, হাত-পায়ের গিঁঠ ব্যথা করে, অনেকের আবার হাড় ক্ষয়ের রোগ দেখা দেয়।
এই সময় সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার হল, বিষণ্ণতায় ভোগা। এই ব্যাপারটা কেউ ভালো বুঝতে চায় না, এটা যে একটা রোগ পরিবারের অন্যান্য সদস্য তা বুঝতে চায় না, এই সময় না বুঝে ডিপ্রেশনের রোগীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এই সময় সহনশীলতাও কমে যায়, দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধে। স্বামী বা ছেলেমেয়ে যদি এই সময় সহানুভূতি না দেখিয়ে উলটো খারাপ ব্যবহার করে তা হলে রোগীকে খুব মানসিক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
এই সময় মেয়েরা চায় ভালোবাসা, ভালোবাসার জন্য সে অনেক অসামঞ্জস্য আচরণ করে, যেটাকে আমাদের সমাজের লোকেরা মনে করে মহিলার পদস্খলন। এই বয়সে দেখা যায়, কারো-কারো ছেলেমেয়ে বিয়ে হয়ে নাতি-নাতনি হয়ে গেছে অথচ মহিলা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এখন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এই রকম ঘটনা অহরহ দেখা যাচ্ছে। আসলে এগুলো পরকীয়াও নয়, পদস্খলনও নয়। মহিলারা চায় কেউ তাকে ভালোবাসুক, আর এই চাওয়াটা কিন্তু অন্যায় নয়। উন্নত দেশে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, প্রতিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে, হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষেরা এখনও এই বিষয়ে অজ্ঞ।
অনেক নারী হরমোন থেরাপি নেয় ডাক্তারের পরামর্শমতো। বয়স চল্লিশের পর থেকে গাইনি ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শ নেয়া উচিত সব মেয়ের। আমি বরং কাউকে-কাউকে বলতে শুনেছি— ‘মেয়েদের এই সময় যৌন ক্ষমতা লোপ পায়, তাই তারা বিচলিত হয়ে পড়ে।’ এটা মানসিক নয়, শারীরিক। শরীরের হরমোন, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরণ চিরদিনের জন্য ফুরিয়ে যায়। সুতরাং শরীরে কিছু পরিবর্তন তো হবেই, আর এই হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মানসিক অবস্থা। এটা একা শুধু মেয়েদের নয়, পুরুষদেরও হয়।
মনোরমা বিশ্বাস, আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক