তামান্না কদর: আমরা নারীরা যারা প্রেমিকা অথবা স্ত্রী তারা সবাই একটা বিষয় ‘খুব বিশ্বাসের’ সাথে ভাবি, আর তাহলো– আমার প্রেমিক বা বর যৌনপল্লীতে যায় না। বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে, কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত। যৌনপল্লীগুলিতে যায় কারা? নিঃসন্দেহে পুরুষ মানুষ। এবং সেই পুরুষ মানুষটি কারও প্রেমিক, কারওবা স্বামী।
এই পুরুষ মানুষগুলো তো যৌনপল্লীতে গমনের জন্যে আসমান থেকে আসে না। এরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো নারীর কাছে খুব গোপনে বিশ্বাসভঙ্গের মতো আচরণ করে। আবারো জিজ্ঞ্যেস করি বিশ্বাসপ্রবণ নারীদেরকে, যৌনপল্লীগুলিতে তাহলে যায় কারা? পুরুষ (প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ)। যারা যায় তারা প্রত্যেকেই আমাদের ঘরেরই পুরুষ। এরা ঘর-বাহির সবকিছু অবিশ্বাসের দূষণে ভরিয়ে দেয়। ‘বিশ্বাস করো সন্দেহকে পাশে রেখে’-এটাই যুক্তির কথা, কেননা সমাজ পুরুষের পতিতাগমনকে কোনো কঠিন দৃষ্টিতে দেখে না।
এই পুরুষেরা আরো একটি অপরাধ সংঘটিত করে আর তা হলো- যে যৌনকর্মীর কাছে যায় বীর্যত্যাগের জন্যে সে নারীকেই আবার ঘৃণা করে। বদমায়েশীর শেষ সীমাটুকুও অতিক্রম করে যায় এরা।
এসব স্থানে গমনের জন্যে বেশকিছু অজুহাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অজুহাত হলো- ‘সাথে থাকা নারী সন্তুষ্ট করতে পারে না।’ অথবা স্ত্রী ছাড়াও অন্য নারীর কাছে নিজের পুরুষত্ব ঠিক আছে কিনা তা প্রমাণের জন্য যায়। অসন্তুষ্টির অজুহাতটি নিয়ে বলতে চাই- কেন যায়? এর কারণ অসন্তুষ্টি বললে ভুল হবে।
যায়, কারণ সমাজ তাদের প্রশ্রয় দেয়। সন্তুষ্ট হবার পরও যায় কারণ তাদের কুরুচি এবং প্রতারণা করবার মানসিকতা গড়ে ওঠে পুঁজি গঠনের মাধ্যমে। সাথে থাকা নারী সন্তুষ্ট করতে পারে না যে-কিনা একগামী আচরণে অভ্যস্ত আর বহুগামী নারী সন্তুষ্ট করতে পারে! হাস্যকর। যৌনকর্মীদের অত সময় কোথায় যে পুরুষের সন্তুষ্টির দিকে তার মনোযোগ থাকবে? সাথে থাকা নারীর যতোটুকু অযোগ্যতা, তা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অশিক্ষার কুফল। এ সমাজ নারীর তার নিজের শরীরকে চিনতে ও জানতে দেয় না। এর প্রমাণ- পাঠ্যসূচিতে শরীর জানার জন্যে যে বিষয়গুলো যা খুবই অল্প তা বেশীরভাগ লোকই মেনে নিতে পারেনি, আরো একটি অবাক করা বিষয় হলো শিক্ষকরা এটা ‘শরমের বিষয়’ বলে পড়াতে চান না।
আর আমার ধারণা ইমপোটেন্ট পুরুষেরাই এসব পল্লীতে গমনে অভ্যস্ত। কেননা ওখানকার নারীকে টাকা দিলেই চলে, সন্তুষ্ট করতে হয় না। ভালোবাসার বা সাথে থাকা নারীকে সন্তুষ্ট করতে হয় এবং সন্তুষ্ট করতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় ইমপোটেন্ট পুরুষ তা করতে অপারগ। নাকি নারীর সন্তুষ্টির কোনো ব্যাপার আছে বলে এসব পুরুষ জানেই না, বা জানলেও মেনে নিতে পুরুষত্বে(!) বাঁধে?
জানা প্রয়োজন- ‘সেক্স পুরুষের জন্যে কাজ আর নারীর জন্যে ধ্যান।’ আরো একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, তা হলো- এই বাংলাদেশে বেশীরভাগ নারীই সেক্সুয়ালি অসন্তুষ্ট। এখন তারাও যদি দাবী করে বসে- ‘পতিত আলয় চাই, আমাদের ঘরের পুরুষেরা অক্ষম।’ তাহলে পুরুষদের কেমন লাগবে?
ধরুন এ দেশে মেয়েদের যাওয়ার জন্য এরকম আরেকটি পল্লী গড়ে উঠলো সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়, আর আপনার সাথে থাকা নারী খুব গোপনে সেখানে যায়, বিষয়টি জানার পর আপনার কী প্রতিক্রিয়া হবে? কোনো যুক্তিতেই কি মেনে নিতে পারবেন? মনে হয় না। যা হোক পাল্টা যৌনপল্লী গড়ে উঠাটাও প্রত্যাশিত নয়। আর যদি পতিতালয় সমর্থন করেন তাহলে তো বলতেই হয়- আপনি সেখানে যান, বেশ তো, তাহলে লুকিয়ে কেনো? আপনার সাথে থাকা নারীকে বলুন- তুমি আমায় সন্তুষ্ট করতে পারছো না, তাই আমি সেখানে গেলাম।’
দেখি সাহস কতোখানি আপনার! যে কাজ লুকিয়ে করতে হয়, সাথে থাকা সঙ্গীর কাছে প্রকাশ করা যায় না, তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যদি যানই যৌনকর্মীর কাছে তাহলে তাকে ঘৃণা কেন করেন? এতো হিপোক্রেসি কেন?
বিঃ দ্র ‘আপনি’ মানে যারা পতিতালয় সমর্থন করেন এবং সেখানে যান।