
জান্নাতুল বাকেয়া কেকা: বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর উৎসবে আজ যোগ হলো আরও একটি নাম রাশেদুল। আগুনে পুড়ে, জ্বলন্ত দগ্ধ মানুষগুলোর স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটছে একে একে। আর আমরা শোক বিহ্বল হয়ে কেবলই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছি, অনর্থক অক্ষমতায় হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করছি। নিজের বিবেক দংশনে জর্জরিত হচ্ছি।
আজ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ! রোজ বুধবার ! উদ্যমী তরুণ রাশেদুলের হিসেব মতো সত্যিই আজ বুধবার। এই বুধবার সকাল ১০টায় যে ছিল সুদূর কাতারের যাত্রী ! সেই উদ্যমী তরুণ এই বুধবারের বিকেল পাঁচটা বিশে পাড়ি দিলো পরপারে ! তবে তার এই যাত্রায় কোনো ফ্লাইট আর লাগেনি। নাশকতাকারীদের কিছু অপতৎপরতাতেই তার এই যাত্রা সুগম হয়ে গেল। রাজনীতির সবশেষ বলী হলো সে।
জীবনের শেষ সম্বল কিছু জমি বেঁচে, ধার কর্জ করে সুদূর কাতার যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিলো এই তরুণটি । স্বপ্ন দেখেছিল একটি সুন্দর জীবনের। সেই রাশেদুল প্রতিদিনই আঙ্গুল ধরে দিন গুণে আসছিলো। আর অপেক্ষায় ছিলো ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবারের। রাশেদুলের সেই কাঙ্খিত বুধবার সকাল ১০ টায় কাতার এয়ার ওয়েজের কাতারগামী ঐ ফ্লাইটটি ঠিকই ছেড়ে গেছে ঢাকার আকাশ। কিন্তু ঐ ফ্লাইটেরর যাত্রী হতে পারেনি রাশেদুল। রা্জধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারের তিন’শ নিরানব্বই কিলোমিটার দূরত্বের পথ পরিক্রমায় ৩ রা ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে প্রিয় স্বজনের আলিঙ্গন ছেড়ে পথে নেমেছিলো। পথে আইকন নামের দূরপাল্লার বাসে বসে হয়তো প্রিয়তমা স্ত্রী, আর তিন ও দুই বছর বয়সের দুই সন্তানের জন্য অশ্রুপাত করেছিলো। আর বৃদ্ধা মা যিনি চোখে দেখেন না, তার জন্য অনুভব করেছিলো গভীর মমতা..কারণ অন্ধ মায়ের এক সন্তান রাশেদুল যে পাড়ি দিচ্ছে সেই সুদূরে। যেখানে যেতে পাড়ি দিতে হয় আকাশ পথের যোজন যোজন মাইল।
সুদূরের এই স্বপ্নচারি তরুণের যাত্রাপথে হামলা দিলো অন্ধকার। অন্ধকারের অতর্কিত দুর্বৃত্তরা সেই অন্ধ মায়ের চোখের আলো রাশেদুলের শরীরের ৮০ ভাগ জ্বালিয়ে দিলো। একই সাথে ঝলসে দিলো বৃদ্ধা মা-প্রিয়তম স্ত্রী আর নাবালক দুই সন্তানের বেঁচে থাকার অবলম্বনও।
গতকালও যে জীবনটা আজকের সকালের ফ্লাইটটির জন্য ক্ষণ গণনা করে আকুলি-বিকুলি করছিলো, ঠিক ঐ সময়টায় বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে থাকা রাশেদুলকে নেয়া হয় লাইফে সাপেোর্র্টে। এরপর দীর্ঘ সাত ঘন্টা মেশিনে চলা শ্বাসপ্রশ্বাসের বিনিময়ে রাশেদুলের জীবনও থমকে গেলো। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল পাঁচটা বিশ !
আজকের সকাল শুরু করেছিলাম একরাশ উদ্যম আর মঙ্গল কামনায়, নিজের স্বজনদের-প্রতিবেশী আর টানা এক মাসের বেশি সময়ে কখন যেন আমার স্বজন হয়ে উঠা রাশেদুল, শহীদূর আর সালাউদ্দীনদের জন্য অনন্য প্রার্থনায়।
কিন্তু আবার মৃত্যুর তালিকা বাড়লো ! রাজনৈতিক সহিংসতার বলিতে যোগ হলো আরো এক নাম….এক স্বপ্নচারীর নাম রাশেদুল !!!!!