
উইমেন চ্যাপ্টার: এই উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিয়ে হরহামেশাই হয়ে থাকে সমস্ত্র ধর্মীয়-সামাজিক বিধিনিষেধ সত্ত্বেও, আর এর হ্যাপাও কম পোহাতে হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরকম বিয়ে সমালোচনার শিকার হয়, মোটামুটি সামাজিক জীবন তাদের তছনছ করে দেয়ার জন্য লোকের অভাব হয় না। পরিবারও মুখ ফিরিয়ে থাকে।
সেই ভারতেই এখন নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এরকম বিয়ের ক্ষেত্রে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিয়েকে উৎসাহিত করতে নগদ অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ভারতের একটি রাজ্যে।
উত্তর প্রদেশের সরকার নব বিবাহিত এরকম ভিন্নগোত্রীয় দম্পতিদের ৫০ হাজার রুপি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে একথা জানিয়ে বলা হয়, সেইসাথে একটি পদক এবং সার্টিফিকেটও দেয়া হবে তাদের।
তবে একটি শর্ত আছে। তা হলো, বর অথবা কনের যেকোনো একজনকে হতে হবে নিম্নবর্ণের। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী নিম্নবর্ণের এই লোকজন সামাজিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত একটি গোত্র, যাদের পক্ষান্তরে শূদ্র বলে অভিহিত করা হয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উত্তর প্রদেশেই এই জাতিভেদ প্রথা প্রকট আকারে বিদ্যমান।
এমন ঘটনাও আছে ভারতে, ভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিয়ের কারণে পরিবারের লোকজন খুন পর্যন্ত করেছে নব দম্পতিকে। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে এই হত্যাকাণ্ডকে নাম দেয়া হয়েছে ‘অনার কিলিং’। এটা ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এখনও প্রচলিত। কোনো আইন করেই এদের প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না।
উত্তর প্রদেশ সরকারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত কর্মীরা। তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে সাধারণের মতামত বা ধ্যানধারণায় অনেক পরিবর্তন আসবে বলেই তারা আশা করছেন। এই ট্যাবু ভেঙে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সময় লাগলেও একসময় তা স্বাভাবিক ঘটনাই হয়ে দাঁড়াবে।
ভিন্ন গোত্রে বিয়ে করেছেন, এমনই একজন রোহিত চৌধুরী। তিনি বলছিলেন, অর্থ পুরস্কার ঘোষণার পর হঠাৎ করেই মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন চলে আসবে, আর তারা দলে দলে বিয়ে করতে শুরু করবে, এমনটি ভাবা বা আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে এটা একধাপ এগিয়ে নেবে পরিবর্তনকে। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষেরই অধিকার আছে সে কার সাথে থাকবে বা কার সাথে জীবনযাপন করবে, তা বেছে নেয়ার। গোত্র বা বিশ্বাসের ওপর ভর করে কারও ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া অন্যায়।
ভিন্নগোত্রের দম্পতিদের বিয়ের সার্টিফিকেটটি কোনো একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়িত হতে হবে। তারপর তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার পর অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে তাদের। এটাই বলা হয়েছে সরকারি ওই ঘোষণায়। এই ঘোষণার পরপরই মিরাটে এরই মধ্যে আটজন দম্পতি তাদের নাম লিখিয়েছেন বিয়ের জন্য, যা কিনা আগামী ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র আগে ৮ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র: বিবিসি