শামীম সুলতানা লিমি: নারীদের পক্ষে যাওয়া যদি বিপদজনক হয় তাহলে আমি বলবো পুরুষদের পক্ষে যাওয়া আরো বেশি বিপদজনক। কিন্তু আমরা কি পুরুষদের পক্ষে যাই না? খালি কি যাই? নিজের নামের সাথে পর্যন্ত যুক্ত করে দেই পুরুষের নাম। যেমন, নাসরিন সিরাজ -নামটি । কখনো বাবার নামের সূত্রে, আবার কখনো স্বামীর নামের সূত্রে -এতোটাই পুরুষপ্রেমী আমরা । যাক, নাসরিন সিরাজের তিনটি পয়েন্টস নিয়ে আমার কিছু কথা:
১। কোকাকোলার সিইও একজন নারী , ২। বাংলাদেশের যুদ্ধ বিমান চালক হিসেবে নারী নিয়োগ/ শান্তিমিশনে নারী সৈন্য রিক্রুট– ৩।. ওবামাকে গার্ড অব অনার দিয়ে কোন প্রথা ভাঙেননি পূজা।
প্রথম জন বিশ্বব্যাপি পদ অর্জন করেছেন, দ্বিতীয়জন বাংলাদেশ এবং শেষজন ভারত। বিষয় তিনটি আলোচিত হলো কেন? কারণ এই প্রথম কাজটি ঘটলো ,আর যা কিছু প্রথম ঘটে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। আর নারীর জন্যে যা প্রথম ঘটে তাকে আরো বেশি করে জানাই। কারণ ওই যে সবাই জানি আমরা নারীর পশ্চাদপদতা। নারীকে ঘরের বাইরে যেতে না দেবার ষড়যন্ত্র ,নারীকে মানুষ না ভাবার পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা , নারীকে দমন পীড়নের সংস্কৃতি ,ইত্যাদি ইত্যাদি …
যৌতুক, হিজাব ও এসিড সন্ত্রাসসহ নানা প্রকার নারী নির্যাতন এবং পুরুষতান্ত্রিক অন্য আরো সব যখন নারীকে মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে দেয় না তখন উক্ত তিন পদে নারী নিয়োগ হলে কেন নারীর পক্ষে যাওয়া বিপদজনক মনে হয় আমি ঠিক বুঝলাম না। সকল ভালো কাজের ঠিকাদারি নারীর কাঁধেই দিতে হবে কেন ? নারীকে কেবল তার নারী ছেঁড়া ধনের খেদমত করতে হবে, এটা কেমন কথা? নারী ছেঁড়া ধনের সব ফরমায়েশ তো নারীই করে, কিন্তু সেই ধনের উপর কি নারীর কোন অধিকার আছে? না আইনগত না সামাজিক? আর এই নারী ছেঁড়া ধন যদি মেয়ে হয়, তাইলে তো আরও গেছেন। এক সময় তো পুঁতেই ফেলা হতো । সূর্যের আলো দেখতে দেয়া হতো না ।
নাসরিন সিরাজকে বলছি, আপনার লেখার কথার যদি মেনে নেই তো ,কোন দেশের প্রেসিডেন্ট যদি নারী হয়, তবুও আমি কোন দিন আনন্দিত হতে পারবো না, বা একজন প্রধান মন্ত্রী হলেও না , আবার একজন সেনা প্রধান হলেও না। মসজিদের ইমাম হলেও না । তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে? পুরুষ যখন ওই সব জায়গা গুলোতে একদম প্রথম থেকেই বসে আছে, তখন নারী যখন ওই পদগুলোতে আসন নিয়েছে আপনি যা বলেছেন তাই হবে। প্রবলেমটা সিস্টেমের, তাতে নারীর পক্ষে বা বিপক্ষে যাবার কারণ কি? তবে হ্যাঁ, ক্ষমতার উঁচু অবস্থানে যখন আমরা নারীকে দেখি তখন আমরা তা মেনশন করি। সমাজে নারীর প্রতি যে ভীষণ নেতিবাচক দৃষ্টি তা কিছুটা হলেই কমছে বলে মনে হয়।
মনে রাখা প্রয়োজন, নারী আর পুরুষ সমান সমান মানে … পাপ আর পুণ্য দুটোতেই নারী আগাবে। সত্য অসত্য , সৎ – অসৎ ইত্যাদিতেও তাই। এটা আমার আপনার ভাল লাগুক বা না লাগুক , এটাই বাস্তবতা ।
এখনো যখন চারিদিকে তাকালে বিপুল পুরুষের উপস্থিতি দেখি আর নারীর উপস্থিতি মাত্র ৩/৫% তখন নারীর পক্ষে যাওয়া বিপদজনক তো নয়-ই ,বরং মঙ্গলজনক বলে আমি মনে করি। আর যারা আমরা এটাকে মঙ্গলজনক মনে করছি তাদেরকে “হ্যালো বেকুবের দল” বলে সম্বোধন, একেবারেই কাণ্ডজ্ঞানহীনের পরিচয় দেওয়া। কে যে কারে বেকুব বলছে, তাই বুঝতে পারছি না।
আশা করি পরবর্তিতে খোলা ময়দানে লেখার সময় এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন।