কিরণ বেদি একহাত নিলেন কেজরিওয়ালকে

kiran_bedi_উইমেন চ্যাপ্টার: আম আদমী পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল একজন মিথ্যুক, তিনি দিল্লিবাসীকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এমনকি আন্না হাজারের মতোন ব্যক্তিকেও মিথ্যা কথা বলে অনশনে বসিয়েছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রার্থী কিরণ বেদী এনডিটিভিতে দিল্লির একটি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এভাবেই একহাত নিলেন কেজরিওয়ালকে।

একজন নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি কি? এ প্রশ্নের উত্তরে কোনরকম দ্বিধা না করেই কিরণ বেদি বললেন, পরিবার। স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজন, নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু সবার সহযোগিতা না থাকলে মেয়েরা এগোতে পারে না। জীবনে কি পেলেন, আর কি পেলেন না, এ নিয়ে কোন আফসোস আছে? ‘একদম না। কোনো আফসোস নেই জীবনে, বরং উল্টোটাই হয়েছে জীবনে’।

ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি খুবই দৃঢ়তার সাথে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, পরিবর্তন আনার আকাঙ্খার কথা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে তাঁর অভিমতের কথা। সাম্প্রতিক সময়ে ‘হোমকামিং’ এর নামে ধর্মান্তর নিয়ে যে ঝড় উঠেছে গোটা ভারতে, সে সম্পর্কে নিজস্ব মতামতও তিনি তুলে ধরেছেন। জাতীয় স্বার্থের প্রাথমিক বিষয় হিসেবে তিনি ‘ইগো’র বদলে একে সেবা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কিরণ বেদি বলেছেন, ‘আমি একটা খোলা বইয়ের মতোন। আমার সবশক্তি কাজের জন্য এবং তা কখনই নেতিবাচক কোনো কাজে ব্যবহৃত হবে না’। আম আদমী পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্পর্কে প্রথমে মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি তাকে খুবই ‘বিষাক্ত’ এবং ‘নেতিবাচক’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ওই পার্টি তাকে বিজেপির এজেন্ট বলছে, যদি তাই হয়, তবে গত বছর কেন তাকে তাদের মুখ্যমন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল?

দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলা হলেও, তিনি অসম্মতি জানিয়ে আসছিলেন। হোমকামিং বা ঘার ওয়াপসি নিয়ে কিরণ বেদি বলেন, ভারতে ধর্মান্তর নিয়ে বিদ্যমানই আইনটি খুবই স্পষ্ট, যদি কোনো বিরোধ না থাকে, তবে যতবার খুশি, যত খুশি যে কেউ ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে। এতে খারাপ কিছু নেই। ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে এ ব্যাপারে। কিন্তু জোরপূর্বক ধর্মান্তর অন্যায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কিরণ বেদি জানান, কুড়ি বছর আগে যখন তিনি সরকারি কাজে যোগ দেন, তখন ফরম পূরণ করতে গিয়ে ধর্মের ঘরে ‘মানবতা’ লিখেছিলেন। তার ভাষায়, মানবতা মানেই সব ধর্মের সমান উপস্থিতি। এর মানে তার কাছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিশ্চান সবাই সমান। এতো বছর তিনি আইন বিভাগে যে সার্ভিস দিয়ে এসেছেন, সেখানে কেউই তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনতে পারবে না বলেও তিনি চ্যালেঞ্জ করেন।  তাছাড়া মুসলমানরাও ভারতীয়। এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয় সবার।

বিজেপির অঙ্গ সংগঠন আরএসএস নারীর ভূমিকা নিয়ে যে মন্তব্য করেছে, সেটাকে তিনি তাদের ব্যক্তিগত মতামত বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, নারীর অধিকার নিয়ে তাঁর অবস্থান খুবই পরিস্কার। নারীরা চার সন্তান জন্ম দিয়ে চলেছে, এ ধরনের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘এটা কি করে সম্ভব? আমি তো এক মেয়ের মা’।

‘আমার অতীত কর্ম, অতীত জীবনযাপন, সবই আমার সম্পদ, যা উল্লেখ করার মতো, কোন দু:খ নেই, কোন আফসোস নেই, বরং নিজের কাজে নিজেই গর্বিত আমি, আর একারণেও গর্বিত যে, আমি দেশের জন্য কাজ করেছি নীতিবোধ, মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে, নারী হিসেবে মাথা উঁচু করে’- এমন বলার সময় বেশ দৃঢ়চেতা বোধ হয় কিরণ বেদিকে দেখে।

মি. মোদি সম্পর্কে আগে টুইটারে যা তিনি লিখেছেন, তা মুছেও দেননি, অস্বীকারও করছেন না কিরণ বেদি। বিজেপি এরপরও তাঁকে তাদের দলে টেনেছে, মুখ্যমন্ত্রীর পদে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে, একে তিনি দলটির মহত্ত্ব বলে উল্লেখ করেন মিসেস বেদি। তিনি বলেন, ‘আমি চামচি নই, কখনও ছিলামও না।

স্মল রেইপ নিয়ে তার করা মন্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘কখনও কোন ধর্ষণকেই আমি খাটোভাবে দেখিনি’।

হ্যাঁ, কাজকেই তিনি বিয়ে করেছিলেন, পরিবারের সমর্থন ছাড়া এটা একেবারেই সম্ভব ছিল না বলেই জানান কিরণ।

হঠাৎ করেই রাজনীতিতে পদার্পণ এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পদে নির্বাচনকে মেনে নিতে পারছেন না অনেক বর্ষিয়ান বিজেপি নেতা। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কিরণ বেদি বলেন, এসব রিপোর্টে সঠিক তথ্যটি উঠে আসেনি। বাড়িয়ে বলা হয়েছে। তবে ৪০ বছর ধরে যারা বিজেপিতে আছেন, তারা কি করে মাত্র ৪০ ঘন্টা আগে যোগ দেয়া একজনকে মেনে নেবে, এ নিয়ে তিনি বলেন, দলের ভেতরে অনেক ভাল গুণসম্পন্ন লোকজনের দেখা তিনি পেয়েছেন। এর সব দায়ভার দলের ইতিহাস, এবং তার কর্মীদের ওপর। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই তিনি আজ এখানে, তার মানে সবাই একসাথে কাজ করবে। আর বিজেপি খুবই ডিসিপ্লিনড একটা পার্টি।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির এমপি মনোজ তিওয়ারির প্রতিক্রিয়ার উত্তরে কিরণ বেদি বলেন, যেকোনো আগন্তুকই নেতা হতে পারে। তিনিই নেতা হবেন, যারা দূরদৃষ্টি আছে, সময়জ্ঞান আছে, সততা আছে, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতা আছে। এরকম ব্যক্তিই নেতা হন, নইলে তাকে হতে হয় অনুসারী।

তিনি তার আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা বড় অংশ জুড়ে আম আদমী পার্টির মি. কেজরিওয়ালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। কিরণ বেদি বলেন, কেজরিওয়াল দিল্লিবাসীকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি দুর্নীতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এমনকি আন্না হাজারের মতো ব্যক্তিকেও তিনি বিপথে চালিত করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন কিরণ।

Kiran 3১৯৮২ সালে যে ঘটনার মধ্য দিয়ে কিরণ বেদি একসময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন, সেটিকেই পুজিঁ করে বিরোধী পক্ষ এখন বাজারে নেমেছে। অপপ্রচার চালাচ্ছে, শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার গাড়িটি তিনি জব্দ করেছিলেন, এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে কিরণ বলেন, ভুল জায়গায় পার্ক করা গাড়িটি তিনি নিজে সরাননি, তার অফিসাররা এই কাজটি করেছিলেন। তিনি বলেন, একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের কাজ এটা না। আমার ইউনিট তাদের দায়িত্ব পালন করেছিল শুধু। ইন্দিরা গান্ধী এসময় বিদেশে ছিলেন, যখন খবরটি চাউর হয়, তখন কিরণ বেদিই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। আর এই ঘটনার পর থেকে তার নামই হয়ে গিয়েছিল, ক্রেইন বেদি।

কিরণ বেদি আরও বলেন, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে তখন আমার দেখাটাই কর্তব্য ছিল যে, আমার অফিসাররা এই কাজটা করার মতোন সাহস রাখেন কিনা। আমি তাদের সমর্থন দিয়েছিলাম, পুরস্কৃতও করেছিলাম। কারণ তারা কোন বৈষম্য দেখাননি। তাদের পাশে দাঁড়ানোই তখন আমার প্রধান কর্তব্য ছিল।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনে তিনি ছয়টি ‘পি’কে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিরণ বেদি জানান, এই ছয়টি পি হচ্ছে প্রিন্সিপালস এন্ড প্যারেন্টস, কমিউনিটি পুলিসিং, প্রিজন রিফর্মস, ফাস্ট প্রসিকিউশন এন্ড প্রেস।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.