উইমেন চ্যাপ্টার: মাধু বাই কিন্নর জন্মসূত্রে দলিত, অবস্থানসূত্রে অস্পৃশ্য, তাঁর অন্য পরিচিতি, তিনি একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি বা হিজড়া। কিন্তু এসবকিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি, তিনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের ‘রায়গড় জেলার মেয়র’।
এই উপমহাদেশে এই গোষ্ঠীর জীবনধারণ অত্যন্ত প্রতিকূল। বাস-ট্রেন-ট্রামে; দোকানে-মোড়ে-বাড়িতে নেচে-গেয়ে; মানুষের পছন্দমত অঙ্গভঙ্গি করে তাদের বাঁচতে হয়। মানুষ হয়েও, যুগ যুগ ধরে তারা চিত্তবিনোদনের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু মাধু ও তার দল এসব প্রতিকূলতা মাড়িয়ে জনে জনে গেছেন, বলেছেন তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের কথা।
রায়গড়ের ঘরে ঘরে গিয়ে বলেছেন- ‘আমাদের একটু সুযোগ দিন; হাসি-আনন্দের সামগ্রী হিসেবে নয়, আপনাদের অবস্থানের উন্নতির জন্য আপনাদের পাশে থাকতে চাই’… রায়গড়ের মানুষও তাদের বিমুখ করেননি, বসিয়েছেন তাদের নেতৃত্বের স্থানে।
উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন এই সামাজিক, রাজনৈতিক উত্থানকে।
মোট সাড়ে চার হাজার ভোট পেয়ে মাধু বাই কিন্নর ছত্তিশগড় মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী কিন্নর হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল বিজেপির একজন প্রতিনিধিকে।
নির্বাচন কমিশনের মতে, কিন্নরই হলেন ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি, যিনি মেয়র নির্বাচিত হলেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় কিন্নর বলছিলেন, ‘জনসমর্থনই আমাকে প্রথমবারের মতোন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস জুগিয়েছে’। এতোদিন তিনি গান গেয়ে, নেচে জীবনধারণ করতেন। তিনি বলেন, ‘মানুষজন আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আমি এই জয়কে তাদের ভালবাসা আর আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছি। তাদের স্বপ্ন পূরণে আমি আমার সবটুকু ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করবো’।
গত বছরের এপ্রিলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে হিজড়াদের আইনীভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আদালত তখন বলেন, প্রতিটি মানুষেরই অধিকার আছে তাদের লিঙ্গ বেছে নেয়ার। আদালতের ওই নির্দেশে সরকারের সব কয়টি প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের চাকুরি দেয়া, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথাও বলা হয়।