আমি কেন হ্যাপির পক্ষে

Happy-Rubel-1418561083উম্মে রায়হানা: এই লেখা তৈরির পেছনে একটা গল্প রয়েছে। হ্যাপি নামের এক অভিনেত্রী, যে কিনা প্রেমে প্রতারিত বোধ করে প্রেমিকের নামে মামলা ঠুকে দিয়েছে, তার নামে ক্রমাগত কুৎসা, নিন্দামন্দ ও হাস্যরসে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আমি একটা লেখা লিখি।

লেখাটিতে আমি মেয়েটির পক্ষ নিয়ে অতি সরল একটি সমীকরণ তৈরি করি। আমার যুক্তিটা এরকম – ধর্ষণ কী?

উত্তর হচ্ছে- যৌনসংসর্গ মাইনাস সম্মতি। ছেলে ও মেয়ের যৌন সংসর্গ দুই পক্ষের সম্মতিতে হয়েছে। সুতরাং সেটা ‘ধর্ষণ’ ছিল না।

কিন্তু,মেয়ের সম্মতি নির্ভর করেছে ছেলের দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপর। ছেলে প্রতিশ্রুতি না রাখলে মেয়ে সম্মতি ফিরিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘটনাটা ধর্ষণ প্লাস প্রতারণা।

মেয়ে বিয়ে করলে মামলা তুলে নেবে বলায় ‘ধর্ষক’কে বিয়ে করতে চাওয়ার ‘দোষে’ তাকে দুষ্ট বলা যেতে পারে। অনেকে বলছেনও।

কিন্তু,যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে সে সম্মতি দিয়েছিলো,সেই প্রতিশ্রুতি যদি রক্ষিত হয়, সে তার সম্মতি ফিরিয়ে দিতে পারে,সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পূর্বে ঘটা বা ভবিষ্যতে ঘটা কোন সংসর্গকেই ‘ধর্ষণ’বলা যাবেনা। বিয়ে একটা চুক্তি। যে কোন চুক্তিতে লেনদেন থাকে। দেনাপাওনা আগাম হতে পারে। ঋণধার চলতে পারে। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগে দেনা পাওনা নিয়ে গণ্ডগোল হলে মামলাও চলতে পারে।

বিষয়টা এরকম সহজভাবে নিতে পারা আমাদের উচিত। আমরা পারছি না কারণ কোন মেয়ে নিজের বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে বলবে আর তার সেই সত্য ভাষণ আমরা শুনবো – সেই মানসিক অবস্থায় আমরা নাই। সেটা আমাদের সমস্যা। মেয়েটির কোন সমস্যা নাই।

এই অতি সরল সমীকরণের উপর ভিত্তি করে স্যাটায়ারধর্মী ওয়েবসাইট দ্রিঘাংচুতে আমার লেখাটি প্রকাশিত হয়। লেখার শিরোনাম ছিল- সম্মতি ধর্ষণ ও একটি সমীকরণ। এ জন্য আরিফ রেজা মাহমুদ টিটর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাখা উচিত, কেননা শিরোনামটি তিনিই ঠিক করে দেন। লেখার লিংকটি আমার ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর আমার শিক্ষক কাবেরী গায়েনতার নিচে মন্তব্য করেন।

বলে রাখা ভালো কাবেরী গায়েন আমার অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক,তাঁর ক্লাস নেওয়ার ধরণ থেকে চিন্তাভাবনা,গবেষণা,গল্প,কবিতা -মোট কথা তিনি মানুষটাই আমাকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছেন, সব সময় করেন।

কাবেরী গায়েনের প্রথম মন্তব্যটা ছিল-

“তাহলে প্রভার সাথে বিয়ের সম্মতিতে যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো কিন্তু প্রভা ‘প্রতারণা’করায় তার প্রেমিক যে সেই সম্পর্কের ভিডিও-ক্লিপ প্রচার করেছিলো সামাজিক মাধ্যমে, সেটা আসলে খুব সাহসের কাজ হয়েছিলো,কী বলো? একই যাত্রায় পৃথক ফল তো হওয়া উচিত না। নারীর জন্য এক বিধান আর পুরুষের জন্য ভিন্ন , এর বিরুদ্ধেই তো আমরা লড়াই করছি।বাই দ্য ওয়ে,প্রভা রব্যাপারটাকেও তাহলে নাম দেই প্রভার দিক থেকে ধর্ষণ+প্রতারণা?… আমি শুধু ভীত এই ভেবে, পৃথিবীরযে কোন প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে না গড়ালেই যদি ধর্ষণ+প্রতারণা মামলায় নিয়ে আসা হয় (কারণ প্রেমের সময়ে অনেক প্রতিশ্রুতি থাকে) এবং মামলার রায় সাব্যস্ত হবার আগেই যদি গণমাধ্যম অভিযোগকারীর পক্ষে জনমত গড়ে ফেলে, এই পৃথিবীতে প্রেম করতে আর কেউ সাহস পাবে তো! কেউ আর ফোনে কথা বলবে মন খুলে যদি জানে তাঁর প্রেমিক/প্রেমিকা ওইপারে আসলে তাদের অন্তরংগ কথাবার্তা রেকর্ড করছে যা একদিন কোর্টে আর গণমাধ্যমে সাপ্লাই দেয়া হতে পারে,বিয়ে না হলে কোনো কারনে? …যান্ত্রিক নারীবাদী ভাবনায় আমার ভীষণ ভয়।”

এই মন্তব্য পড়ে আমি একটু দমে যাই।আমার নিজের নারীবাদী বোঝাবুঝিতে কোন ফাঁক নেই, ভুল নেই এরকম আমি মনে করিনা।

কিন্তু সাধারণভাবে যে কেউ এবং বিশেষভাবে কাবেরী গায়েন, আমাকে ‘যান্ত্রিক নারীবাদী ভাবনা’য় আচ্ছন্ন মনে করলে আমি নিজের সমস্ত চিন্তাই আবার ঝালিয়ে নিতে রাজী আছি।

আমি পরপর দুটো মন্তব্যে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করি এভাবে-

“ম্যাম,আমি কিন্তু হ্যাপির ব্যাক্তিগত সম্পর্কের ডিটেইল ফাঁস করাটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি না ।আর এটাও বলছি যে মামলায় কে জিতবেে আর কে হারবে,অর্থাৎ কে ভুল আর কে ঠিক -তা তো রায় দেব আদালত- আমি একতরফাভাবে মেয়েটিকে সমালোচনা করার নিন্দা করছি”

“এ প্রসঙ্গে প্রভার বিষয়টির আমি ভাবিনি, তবে মনে আছে বিখ্যাতর এক গায়ক রুমি, স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করায় প্রথম স্ত্রী মামলা করে। দাম্পত্য উদ্ধারের জন্য যদি মামলা হতে পারে,সম্পর্ক উদ্ধারের জন্য কেন হতে পারবেনা?-এমন প্রশ্ন জেগেছে মনে। রুমির স্ত্রীকে কিন্তু কেউ বেহায়া বলেনি- তাকি তিনি কলিমা পড়ে বিয়ে করেছেন বলে?”

এরপর তিনি আরও বুঝিয়ে লেখেন-

“১। মানুষের সাথে মানুষের প্রেমের সম্পর্ক কোনো চুক্তির বিষয় নয়, তাই এখানে আইন চলে না। বিয়েটা আইনী চুক্তি- সেখানে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া চলে। এক্ষেত্রেও আদালত খোরপোশ পর্যন্ত উদ্ধার করে দিতে পারে,শাস্তি দিতে পারে ‘পবিত্র বৈবাহিক’ জীবনের প্রতিজ্ঞা ভংগ করার জন্য কিন্তু তাদের মনোদৈহিক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে পারে না। কাজেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়া উদ্ভাবন্মূলক শোনালেও বাস্তবসম্মত মনে হয় না, বরংবন্ধু-বান্ধবদের মধ্যস্থতা খানিক কাজের হতে পারে।

২। বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন প্রথম স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের বিধান রেখেছে। তারপরও রুমির ঘটনায় কিন্তু খুব বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো। আর রুমির প্রথম স্ত্রী করেছিলো নির্যাতন মামলা। বিষয়গুলো্র পার্থক্য নিয়ে ভাবার আছে।

৩।হালকা একটা উদাহরণ দেই। মুমু আমার ছাত্রী, ওকে ভালোবাসি, যখনও কাজ করেছে আমার সাথে তখন প্রায়ই দেখা হতো। এর পরে আর দেখা হয়নি। দেখা হলে নিশ্চয়ই আমার ভালো লাগতো। ও অনেকবার বলেছে, আসবে, কিন্তু আসেনি। যখন ও ডিপার্টমেন্ট থেকে আমার জন্য বেঁধে দেয়া রিসার্চ স্টুডেন্ট, তখনও নিয়মিত না এলে আমি প্রয়োজনে একাডেমিক কমিটিতেও তুলতে পারতাম, প্রয়োজনে ওকে ‘শায়েস্তা’ করতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটা পারি না। কখন কোর্টে যেতে হবে, আর কখন মানবিকভাবে শেষ করতে হবে, এই ধারণাটি পরিস্কার থাকা দরকার।”

যারা মেয়েটিকে নষ্টা, কুচরিত্র,’আগে কি ফিডারে করে দুদু খেতে?’ ‘প্রলোভন আবার কী?’ ‘মজা লোটার সময় মনে ছিল না?’- ইত্যাদি বলে লেবেল সেঁটে দিচ্ছে, কলঙ্কিত করছে তাদের নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই। তাদের মানসিক দীনতা আমার বোধগম্য।

কিন্তু আমার শিক্ষক যে কারণে আমার যুক্তিগুলোর সমালোচনা করছেন সেটা সম্পূর্ণ বিপরীত, সেটা তাঁর নারীবাদী অবস্থান। ফলে আমার দিক থেকে প্রচুর ভাবনার প্রয়োজন আছে বৈকি।

আইন সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকায় আমাকে বারংবারই ঠোক্কর খেতে হচ্ছে। মামলাটা আদৌ ধর্ষণ মামলা ছিল কিনা, থাকলে কোন ধারা বা উপধারায় সেটা না জানার কারণে এখনও অনেক কিছুই অস্বচ্ছ রয়ে গেছে।

এ পর্যন্ত চিন্তা করে আমি নিজের যুক্তির মধ্যে যে দুর্বলতাগুলো খুঁজে পেয়েছি, সেটা আগে বলি।

এক, প্রেম নামক মানবিক সম্পর্কের সঙ্গে বিবাহ নামক আইনগত, ধর্মীয়ও সামাজিক সম্পর্ককে গুলিয়ে ফেলা।

দুই, যৌন সম্পর্কের মধ্যে নারীকে নিষ্ক্রিয় ফ্যাক্টর হিসাবে বিবেচনা করা।

তিন, সতীত্ব কে নারীর একটি সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা।

প্রথম পয়েন্টের ক্ষেত্রে আমি একই কথা আবারও বলতে চাই।

আমার মতে, শর্তহীন স্বর্গীয় প্রেম বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। প্রেমের সম্পর্কও দেনাপাওনার সম্পর্ক। যুগভেদে,স্থানভেদে নারী-পুরুষসম্পর্কের নানা রকম মাত্রা দেখা গেছে। বিবাহ শর্তবিহীন,বিবাহ বহির্ভূত,পরকীয়া প্রেমের প্রচুর উদাহরণ সমাজে রয়েছে। এ সময়ে অবিবাহিত নারী-পুরুষও কোন রকম পরিণতির প্রত্যাশা না রেখে মুক্ত মানসিক ও যৌন সম্পর্কে হামেশাই যাচ্ছেন।

কিন্তু,সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রেম কোনটা?এই সময়ের বাস্তবতায় কখন বাবা-মা তাঁদের কন্যা সন্তানকে বেশি রাত করে ছেলে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরা অনুমোদন করেন? যে প্রেমে পরিণতির আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেটা বলা হোক আর না বলা হোক।

একজন বিবাহিত নারী বা পুরুষ কি সামাজিকভাবে, আইনগতভাবে তাঁর সঙ্গী নন এমন কাউকে নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন? না তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?

ফলে,সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য যে প্রেম তাকে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সম্পর্ক বললে অত্যুক্তি হয় না। আর যেহেতু বিবাহ একটি চুক্তি, সেই চুক্তির আগাম দেনা-পাওনা,শর্ত,প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি নিয়ে মামলা হতে পারে বলেই আমার মনে হয়।

দ্বিতীয় পয়েন্টে, যৌন সংসর্গে নারী নিষ্ক্রিয় ফ্যাক্টর কিনা, সম্মতির সঙ্গমে নারী আনন্দ পায় কি পায় না – এই প্রশ্ন চলে আসে এবং তার উত্তরও আমাকেই দিতে হবে।

আমার উত্তর হচ্ছে – হ্যাঁ,নিশ্চয়ই সম্মতির সঙ্গমে নারী আনন্দ লাভ করে। নিশ্চয়ই যৌনকর্ম পুরুষের একচেটিয়া নয়। নারী সঙ্গম শুধুমাত্র উপভোগ করে তাই নয়, প্রকৃত সঙ্গমে সে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে অংশগ্রহণও করে।

তাহলে সম্মতির সাপেক্ষে ধর্ষণকে দেখার জায়গা কিভাবে তৈরি হয়?

আমার কথা হচ্ছে, একবার সম্মতি মানে যদি আজীবনের সম্মতি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে নারী প্রশ্নে ‘দাম্পত্যধর্ষণ’ নিয়ে লড়াই করব কী করে?

তখন কি আদালত আর সমাজ আঙ্গুল তুলে বলবে না- হ্যাবলা কবুল কইছলা ক্যারে? (তখন কবুল বলেছিলে কেন?) এদেশের আইন দাম্পত্য ধর্ষণকে ধর্ষণ বলে স্বীকার করে না।সত্যি।

কিন্তু দাম্পত্য ধর্ষণ কি সমাজে নেই?এ দেশের ধর্ষণ আইন কি যথাযথ? একজন বিবাহিত নারী, যিনি নিয়মিত যৌন সংসর্গে অভ্যস্ত তিনি কি ‘দুই আঙ্গুল পরীক্ষা’ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যে ধর্ষণ ঘটেছে তা প্রমাণ করতে পারবেন? ধর্ষণ কি শুধুই পেনিট্রেশন?

তৃতীয় পয়েন্ট- ‘সতীত্ব’ কি নারীর সম্পদ কিনা, যা প্রলোভনের মাধ্যমে লুঠ হয়ে গেলে সে মামলা করে দিতে পারে।

এর উত্তর একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না। হ্যাঁ এজন্য যে সমকালীন সমাজ বাস্তবতায় ‘সতীত্ব’ অবশ্যই নারীর জন্য একটি সম্পদ, একটি সামাজিক মূলধন।

এটা হওয়া উচিত কি উচিত না, সেটা অন্য প্রসঙ্গ। সে প্রসঙ্গে অন্য সময় কথা বলা যাবে।

কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, স্পর্শের অতীত, অধরা এই ‘সম্পদ’ নারীর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে। যে কারণে ১০ বছরের কন্যাশিশুও ধর্ষিত হলে আমরা তার নাম প্রকাশ করি না, গণমাধ্যমে তার চেহারা দেখাই না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এইক্ষেত্রে মেয়েটি তো নিজেই নিজের ‘সতীত্ব’ খুইয়েছে,স্বেচ্ছায়।তাহলে সে সামাজিক মূলধন লুট হয়ে যাওয়ার দাবি তুলতে পারে কী করে?

দাবি তুলতে পারে এ জন্যে যে,সে এই সম্পর্ককে দেখেছে বিবাহের সাপেক্ষে। মুসলিম বিবাহে নারীকে মোহরানা নামে যে অর্থ প্রদান করা হয়, সেটা তার সতীত্বের মূল্য। মেয়েটি তার’সতীত্ব'( বা সামাজিক মূলধন) দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তার মূল্য পায়নি। সেই দাবিতে সে লড়াই করছে।

এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা যোগ করা প্রয়োজন বলে মনে করি-হ্যাপির এই সাহসিকতাকে আমি সাধুবাদ জানাই কারণ দেশখ্যাত এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে সে মামলা ঠুকে দেওয়ায়, যারা ‘মিডিয়ার মেয়েদের কোন চরিত্র থাকে না’,’এদের ইচ্ছা করলেই বিছানায় নিয়ে যাওয়া যায়’ – এই ধরণের মানসিকতা নিয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা খানিকটা হলেও ধাক্কা খাবে।

কোন মেয়েকে প্রেম করার/বিয়ে করার আশ্বাস/প্রলভন/লোভ দেখিয়ে বিছানায় নেওয়ার চেষ্টা করার আগে দশবার ভাববে।

খেয়াল করুন, পুরুষরা ভীত হয়ে পড়েছে, জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে যদি প্রেম করে বিয়ে না করার ‘অপরাধে’জেলে যেতে হয়, তাদের ভবিষ্যৎ তাহলে কী? রুবেলের প্রতি তাদের সহানুভূতির অন্ত নাই। যে প্রেম হ্যাপিকে ‘নষ্টা’ করে দিয়েছে,সেই একই প্রেম রুবেলকে স্পর্শও করতে পারেনি। রুবেল যেমন অবলীলায় অস্বীকার করেছেন, সবাই তেমন মেনেও নিয়েছে তার কথা।

এই ভীতির কারণ একটাই, প্রেম তাদের কাছে সমঝোতার মাধ্যমে সম্পর্ক নয়, পরস্পরের দেহমনের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জীবনে আনন্দের চাষাবাদ নয়,নারী তাদের কাছে ভোগের বস্তু, নারীর যৌনতা তারা লুট করতে চান।

যেহেতু সে লুটেরা চরিত্রই নিজের মধ্যে ধারণ করে, তাকে শায়েস্তা করতে আইন ও সমাজকেও স্বীকার করতে হবে এই লুটের সত্যতা। বিয়ে বিষয়টার উপর মাহাত্ম্য আরোপ না করে একে চুক্তি হিসেবে দেখা দরকার। সামাজিক এই চুক্তির মধ্যে নারী যেভাবে সবসময় ঠকে যাচ্ছে তাকে চিহ্নিত করা দরকার। সম্পর্ক যখন দাম দেওয়ার বা লুটের, আইনকেও সেভাবে চালানো দরকার।

হ্যাঁ, অত্যন্ত পুরুষতান্ত্রিক ভাবধারায় আচ্ছন্ন কথা বলছি আমি। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, যেখানে কোথাও সমতা নেই, শুধুমাত্র ‘প্রেম’ নামের এক স্পর্শের অতীত, স্বর্গীয় অনুভূতির নামে সমান সমান আইন আমি চাই না।

তাই আমি হ্যাপির পক্ষে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.