সাধ্য নেই এ আলো রুখে দেয়ার

Garment worker 1ফারহানা আনন্দময়ী: সেদিন ভোরে এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম KEPZ এর সামনে দিয়ে যখন পার হচ্ছিলাম, কী এক অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়লো। একটি দু’টি মুখ নয়, শত সহস্র নারী নয়, অযুত লক্ষ নিযুত কোটি সূর্য পথ আলো ক’রে রয়েছে। আলোর মিছিল যেন।

তীর্থযাত্রা বা কাফেলা দেখিনি কখনো… কিন্তু সেই সকালে পুরো রাজপথ জুড়ে জীবনের তাগিদে বেরিয়ে আসা গার্মেন্টস অভিমুখী সহস্র নারীর স্পর্ধিত পথচলা আমাকে কাফেলা শব্দটা মনে করিয়ে দিল। আমাদের যানটি এগুতে পারছে না, এয়ারপোর্টে পৌছুতে দেরী হচ্ছে। কিন্তু তাতে আমার এক বিন্দুও বিরক্ত লাগছে না। বরং তাঁদেরকে দেখে ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত এক আনন্দ, অদম্য এক সাহস অনুভব করছিলাম। এরাই তো আমাদের দেশের অর্থনীতির পায়ে চাকা লাগিয়ে দিয়েছে।

দীপ্ত এবং দৃপ্ত পদক্ষেপে ওরা এগুচ্ছে, ওদের সঙ্গে দেশও এগুচ্ছে। তাঁদের মুখে মানুষের মুখের অবয়ব দেখতে পাচ্ছিলাম না। যেন এক একটা সূর্য জ্বলছে অগণিত গার্মেন্টস কর্মীর মুখে।

সেই মুহূর্তে নতুন ক’রে বিশ্বাস ঘন হলো… কোন পুরুষতন্ত্রের অন্ধকার, ধর্মের অন্ধকার, অমানবিকতার অন্ধকারের সাধ্য নেই এই আলো নিভিয়ে দিতে পারে। ইসলামের কোন হেফাজতকারীর শক্তি নেই এই আলোর বন্যাকে অন্ধকারের চাদরে ঢেকে দিতে পারে। যারা একবার জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে, মুক্তির স্বাদ নিতে শিখেছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা পেয়েছে… তা সে যত অল্প আয়ের মাধ্যমেই হোক… তারা আর কখনোই জীবনের মুখ পিছনে ঘুরিয়ে পুরুষের শোষণ আর ধর্মের অ-শাসনের কাছে নত হবেনা।

আমি বিশ্বাস করি, নারীকে অবদমন করার যে কোন ফতোয়া রুখে দেয়ার জন্য এরাই যথেষ্ট। গার্মেন্টস কর্মী এই মা-বোনেরাই প্রকৃত বিপ্লবী, এবং সময়ের প্রয়োজনে বিদ্রোহী। এরাই যদি সমস্বরে একবার চিৎকার করে বলে ওঠে, না, আমরা এই ধর্মীয় নিষেধের বেড়া মানিনা তবে কোনো হুজুরের আর দুঃসাহস হবেনা নারীদের ঘরের চার দেয়ালে বন্দী করার ফতোয়া দেয়ার।

হে আমার আগুন, তোমরা যদি জ্বলে ওঠো বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তান হবে না।

পথ চলতি ভোরের এই একটি দৃশ্য আমাকে কী দারূণ সাহসী আর আশাবাদী ক’রে তুললো। জয় হোক এই অগণিত আলোকিত সূর্যরূপা গার্মেন্টস কর্মীদের।

২০১৫ তে এরাই আমাদের অন্ধকারের বন্ধ দ্বার ভাঙুক, আলো আসুক, ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়ুক, জীবন গেয়ে উঠুক সত্যিকারের মুক্তির গান।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.