ফেমিনিস্ট বনাম অ্যান্টিফেমিনিস্ট

Anti Feministতামান্না কদর: অ্যান্টি-‪ফেমিনিস্টদের দাবি, নারীবাদ নারী-পুরুষের সমতার বদলে নারীর প্রতি পক্ষপাত এবং নারীর একক আধিপত্য তৈরি করে। যদিও নারীবাদ মোটেই তা নয়, কিন্তু অ্যান্টি-ফেমিনিস্টদের দাবিটা যদি সত্যি হতো তাহলে ভালো হতো এবং হওয়াই উচিত কেননা নারীর জন্যে এবং সমাজের জন্যে পুরুষের চে’ ক্ষতিকর আর কিছু নেই।

পুরুষের ভালোটুকুর মধ্যে কেবল কার্যকর লিঙ্গটিই নারীর যৌনসুখের জন্যে প্রয়োজনীয়। সমকামী নারীর বেলায় তাও প্রয়োজনহীন। আর মানব প্রজাতির অস্তিত্বের কথাটি যদি আসে তাহলেও সেই একই বিষয় দাঁড়ায়, তবে তখন শুধু কার্যকর লিঙ্গটি হলেই চলবে না, উর্বর শুক্রাশয়ও প্রয়োজন হবে। পুরুষ প্রয়োজন, নারী এবং মানব প্রজাতির জন্যে এতোটুকুই। আবার অ্যান্টিফেমিনিস্টরা একই সাথে বলেন, ‘নারী-পুরুষের ভিন্নতাকে স্বীকার করে নিতে হবে।”

অ্যান্টি ফেমিনিস্টরা ওপরের যে ধারণাটি পোষণ করেন, তা ভয় থেকে করেন। তার একমাত্র প্রমাণ, মাত্রাতিরিক্ত ভয়ের কারণে আবার তারাই বলে-”ফেমিনিজম আসলে খুব বেশী কিছু নয়, এটি হলো বয়সের কারণে যারা সমাজ, বিয়ে, পরিবার এবং নারী-পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে ফ্যান্টাসি করে তাদের মতাদর্শ।” খুব ভয় থেকে এরা এটা উচ্চারণ করে।

এভাবে নারীবাদীদের হতাশ, নি:স্পৃহ এবং নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে চায়, কারণ তারা ঠিক বুঝে গেছে নারীবাদের মাধ্যমে অর্জিত সাম্য, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত পুরুষদের সুবিধাগুলি বাতিল করে দেবে।

অ্যান্টিফেমিনিস্টরা বলেন, ‘পুরুষের প্রকৃতিগত ভিন্নতাকে স্বীকার নিতে হবে।” একজন ফেমিনিস্ট হিসেবে আমিও স্বীকার করে নিতে চাই। প্রকৃতিগত ভিন্নতাকে স্বীকার করে নিলে, গর্ভধারণ, গর্ভপাত স্বাধীনতা, সন্তানের অভিভাবকত্ব শুধুই নারীর। বিয়ে নামক কৃত্রিম পদ্ধতিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সংসার নামক সংগঠনটি দ্বারা নারীর নিষ্পেষিত হবার দিন তাহলে ফুরোয়। একই সাথে অ্যান্টিফেমিনিস্টরা বলেন, নারী-পুরুষের ভিন্নতাকে স্বীকার করে নিতে হবে আবার।

তারা বলেন, ‘নারীবাদ, চিরায়ত প্রতিষ্ঠান (বিয়ে) ধ্বংস করে, নারীর দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ নারীর হয়ে পড়ে, পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়, গর্ভধারণ না করার স্বাধীনতা দেয়, পরিবার ভাঙছে, তালাক হচ্ছে।” অ্যান্টিফেমিনিস্টদের কথামতো নারী-পুরুষের ভিন্নতাকে স্বীকার করে নিলে, গর্ভধারণ, গর্ভপাত, গর্ভ না ধারণ শুধুই নারীর সিদ্ধান্ত কেননা এসবের ফল সরাসরি নারীর শরীরকেই ভোগ করতে হয়। এখানে এন্টিফেমিনিষ্টরা স্ববিরোধী। আরো হতাশার বাক্য-”নারীর দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ নারীর হয়ে পড়ে, পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়”।

এখানে অ্যান্টি ফেমিনিস্টরা অসভ্য, ইতর। শরীর যার, নিয়ন্ত্রণ তো তারই থাকবে, জীবন যার জীবিকা নির্বাচনের অধিকার তো তারই। খুব বেশী ভয় পেলে মানুষ আবোল-তাবোল বকে। অ্যান্টিফেমিনিস্টরা নারীবাদের সূর্যশক্তিতে অতিমাত্রায় ভীত। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে তারা ডিভোর্সকে সামনে এনেছে। নারীর অগ্রণী ভূমিকা (ডির্ভোসের ক্ষেত্রে), সংসার ভাঙ্গন, শিশুদের নাজুক পরিস্থিতি, নানাবিধ সামাজিক বিপর্যয়ের কথা বলছে।

সংসার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ, নানাবিধ সামাজিক বিপর্যয় রোধের দায়িত্ব একা নারী বইবে কেন তার স্বকীয়তা আর অধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে? বিয়ে একটি কৃত্রিম পদ্ধতি যার মাধ্যমে নারী তার সর্বোচ্চ বিসর্জনটি দিয়েছে। এই বিয়ে, পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্যে নারী কেন মরিয়া হবে? বিয়ে, পরিবারের মাধ্যমে পুরুষ সুবিধেভাগী, নারী সুবিধেবঞ্চিত।

তারা বলে,‘সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাশীল থাকা প্রয়োজন’। যদি কোন প্রতিষ্ঠান পুরুষকে সুবিধা দেয় আর নারীকে নির্যাতন করে অথবা নির্যাতনের পথ তৈরি করে দেয় তবে সে প্রতিষ্ঠানের জন্যে নারী কাঁদবে, কোন বুদ্ধিতে?

তারা আবার বলে- ‘নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক বৈষম্যকে অস্বীকার করা যায় না’। আমিও বলি, করা যায় না, পুরুষ গর্ভধারণ করতে পারে না, সন্তানকে স্তন্য দান করাতে পারে না। তারা এও বলে- ‘নারীবাদের ফলে বিয়ে-বহির্ভূত মাতৃত্ব বেড়ে গিয়েছে’।

ভালো করে খেয়াল করুন, নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক বৈষম্যকে স্বীকার করে নিয়ে বলা যায়, ‘প্রকৃতি কিন্তু বিয়েবহির্ভূত মাতৃত্বকে অস্বীকার করে না, প্রকৃতি পরোয়া করে না-কাদের বিয়ে হলো, কাদের হলো না, মাতৃত্বের পরিচিতির জন্যে কোনও কৃত্রিম পদ্ধতিরও প্রয়োজন পড়ে না’।

অ্যান্টি ফেমিনিস্টদের বোঝা উচিত- ‘নারীবাদ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে লিঙ্গবাদ দিয়ে পুরুষ সুবিধাভোগের মা্ধ্যমে নারীর উপর যে অমানবিক নিষ্পেষণ চালায় তার মূলোৎপাটন করে’।

যেভাবে শুরুতে বলেছিলাম, অ্যান্টি ফেমিনিস্টরা বলে- নারীবাদ নারীর আধিপত্য তৈরি করবে’। এমনটি হলে আমার চে’ বেশি কে খুশি হতো! দীর্ঘদিন পুরুষ সুবিধা ভোগ করেছে, নারী নির্যাতিত হয়েছে। এখন এর বিপরীত ব্যবস্থাটিও হওয়া উচিত। নইলে পুরুষ, লিঙ্গিয় চেতনা থেকে নির্যাতনের যন্ত্রণা বুঝবে কি করে! প্রতিশোধ নেয়াটা মহোত্তম। ক্ষমার মহত্ত্ব দুর্বলতা মাত্র এই পরিসরে।

 

শেয়ার করুন: