তনয়া দেওয়ান:
স্বাধীনতা!!!!
কে বলে নারী তুমি স্বাধীন?
আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে, এমনকি মনের দিক থেকেও কি নারী তুমি স্বাধীন?
পৃথিবীতে দুই স্তরের মানুষের মধ্যে পুরুষ মানুষ প্রথম স্তরের, আর মেয়ে মানুষকে দ্বিতীয় স্তরের হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সেখানে তো আমরা উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে আরও একধাপ পিছিয়ে, তাই তো খবরের পাতায় অহরহ ধর্ষণের খবর, নারী নির্যাতনের খবর।
আর যেসব খবরের পাতায় আসে না তা কি আমরা জানি?
সেখানে আমার মতো যেসব আদিবাসী নারী আছে, তাদের অবস্থা কি একবারও ভাবতে পেরেছেন?
বলতে বাধ্য হচ্ছি, কিছু কিছু বাঙালি ছেলের মনমানসিকতা এতোটাই কুরুচিপূর্ণ যে তারা ডিফরেন্ট (তাদের ভাষায় দেশে থেকে বিদেশি মাল) টেস্ট নেওয়ার জন্য চাকমা মেয়ের সাথে প্রেম করতে চায়। ভাই, ভালোবাসাকে খারাপ বলছি না, তবে তথাকথিত ডিফরেন্ট টেস্ট নেওয়ার জন্য প্রেম, আপনার চরিত্রকে কীভাবে বিশ্লেষণ করে? আপনার ব্যক্তিত্বকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে?
আপনারা কি জানেন, আপনাদের মতো কিছু মূল্যবোধহীন, ব্যক্তিত্বহীন, কুরুচিপূর্ণ ছেলের জন্য আমরা পাহাড়িরা পুরো বাঙালি জাতির সাথে মিশতে ভয় পাই? তাই তো কোনো বাঙালি ছেলে বন্ধুত্ব করতে আসলে প্রথমেই মনের কোনে উঁকি দেয়, কী উদ্দেশ্য নিয়ে আসলো? লালসা পূরণের কামনা নিয়ে আসেনি তো? আমার ক্ষতি করবে না তো?
এখন নিশ্চয়ই আপনারা বলবেন, হাতের পাচঁটা আঙ্গুল সমান নয়, জী, সেটা আমরাও জানি, কিন্তু খালি চোখে লবন আর চিনি দেখতে যে একই রকম।
ভাই, দয়া করে দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, আমরা পাহাড়ি নারীরা সমতলের নারীদের মতো স্বাধীনতা চাই, উগ্রতা নয়।
আমার এক বোনের কিছুদিন আগের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, আনুমানিক সপ্তাহখানেক আগে সে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল (বলাবাহুল্য ওই রেস্টুরেন্টের আশেপাশে শহরের বেশ নাম ডাকওয়ালা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, তো স্বাভাবিকভাবেই ওই রেস্টুরেন্টে টিনএজার ছেলেমেয়েদের আনাগোনা বেশি।) খাওয়ার এক ফাঁকে টিটকারিমূলক মন্তব্য আসলো, সাথে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যমূলক হাসাহাসি, দেখে বোঝা গেল ভার্সিটি পড়ুয়া একদল ছেলেমেয়ে। ভার্সিটি পড়ুয়া ওই ছেলেমেয়েরা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিক্সা ঠিক করার জন্য পার্কিং এ থাকা একটা দামী ব্র্যান্ডের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।
তারপরও তাদের বোধোদয় হলো কিনা জানি না। ভাই, চাকমারা বা পাহাড়িরা বা আদিবাসীরা সবাই কিন্তু লেখাপড়া না জানা, প্রযুক্তির ছোঁয়া না পাওয়া, গহীন জঙ্গলে বাস করা মানুষ, এমন কিন্তু না।
সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর,
জাগো হে সভ্যতা, জাগো।