মন্ত্রী সাহেব মানুষের বাচ্চা তো!

শারমিন জান্নাত ভুট্টো: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কী ঘটেছে তা অবশ্য এরই মধ্যে সবারই জানা। ঘটনার সূত্রপাতও সেই পুরনো সুতাকে ঘিরে, ধর্মীয় অনুভূতি রোগ। এ রোগের প্রাদুর্ভাবে ক্ষত-বিক্ষত সংখ্যালঘুরা। কী মন্দির, চার্চ আর প্যাগোডা- রেহাই নেই কোন ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংসের লীলা থেকে। যারা ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে অন্যদের প্রার্থনার জায়গা গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেদের ধর্মপ্রাণ দাবী করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস কতটা নড়বড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

bhutto-2
শারমিন জান্নাত ভুট্টো

অদূর ভবিষ্যতে যদি এ অনুভূতি রোগ মহামারি আকার ধারণ করে তাহলে খুব বেশী অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না। তবে এ রোগ যে রাজনৈতিক আস্পর্ধায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র তাদের ভোটের কারণেই আইন ও সংবিধান সংশোধন করছে একের পর এক। এমনকি যতবারই এ ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে, ততবারই ওই ঘটনাগুলো ছলে-বলে-কৌশলে রাজনৈতিক দলগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে এক দল আরেক দলের ওপর। এমনকি মাঝে-মধ্যে ঘটনার পক্ষে সাফাই গাইতেও কার্পণ্য করছে না।

ভাবটা এমন যে, শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই অনুভূতি আছে, আর এ কারণে তাদের সাত খুন মাফ। অথচ নির্বাচনের আগে এ সংখ্যালঘুদের বাড়ি গিয়ে গিয়ে ভোটের আবদারের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি ঠিকই দিয়ে এসেছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা। ভোটের খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিশ্রুতিও কেমন জানি হাওয়াই মিলিয়ে গেলো। অবশ্য গত নির্বাচনে ভোট নিয়ে তো প্রশ্ন আছেই!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার পর মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট মো: ছায়েদুল হক এমপি যে ভাষায় তার প্রতিক্রিয়া জানালেন তা ছিলো এক কথায় ‘অসাধারণ’, তবে অনভিপ্রেত নয়।

“মালাউনের বাচ্চারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে” আর এ ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে অতিরঞ্জিত করেছে সাংবাদিকরা অথচ ঘটনা কিছুই নয়

                                                                               এডভোকেট ছায়েদুল হক,মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী

মন্ত্রী নিজেই যদি মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেয় তাহলে তো আর বোঝার বাকি থাকে না, ধর্মীয় অনুভূতি রোগে আক্রান্তরা কোথা থেকে এতো সাহস পায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর। মন্ত্রী হয়তো ধর্ম দিয়ে মানুষ বিচার করে আর তাই তো অন্য যেকোন ধর্মের মানুষকে মালাউন বলে গালি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না।

মন্ত্রীরা যদি এহেন ব্যবহার করেন সংখ্যালঘুদের সাথে, তাহলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কার কাছে বিচার চাইবে আর কে বা শুনবে তাদের হাহাকার?  

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সাথে জড়িত, তখন মন্ত্রী কেনই বা সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলবেন। তাদের প্রয়োজন তো ভোটের (?) পরপরই মিটে গেছে।

secular-3
ছবিটি সংগৃহীত

যে ধর্মের বড়াই করে মন্ত্রী অন্য ধর্মাবলম্বীদের হেয় করছেন তিনি হয়তো এও ভুলে গেছেন, ১৯৭১ সালে এ ধর্মের নামেই এ দেশে হত্যা, ধর্ষণ আর লুটতরাজ চালানো হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা লঘিষ্ঠ না বুঝে, মন্ত্রী আপনি কি পারেন না ঐ অবহেলিত আর নির্যাতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে? আপনার ধর্মে কি সহানুভূতি প্রকাশের কথা লেখা নেই?  

ইশশ কী অপমান, কী লজ্জা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কাবা শরীফ রক্ষায় সেনাবাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত, অথচ নিজ দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীরা যখন অত্যাচারের শিকার তখন কোথায় থাকে আপনার সেসব আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী? বোধহয় স্বপ্নে বিভোর থাকে; অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র দেখার স্বপ্নে।

জনপ্রতিনিধিদের কখন আর কোথায় কোন শব্দ ব্যবহার করতে হবে সেদিকেও বোধহয় প্রধানমন্ত্রীর চোখ বুলানোর সময় হয়ে এসেছে। কোনদিন আবার নরেন্দ্র মোদীকে না এসব মন্ত্রী ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে বসে কে জানে! তাই দেরী হওয়ার আগে তাদের জবানটা একটু টেনে ধরুন প্রধানমন্ত্রী। আপনার বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে অন্য আর কারো দরকার পড়বে না। পরে একূল-ওকূল দুদিকই যাবে। এখনই সামলান আপনার মন্ত্রীদের………

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.